সালাম মাহমুদ: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর আঞ্চলিক কেন্দ্র, নীলফামারীর সৈয়দপুরে গতকাল (১৩ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে।
সকালে বিএলআরআই আঞ্চলিক কেন্দ্র,সৈয়দপুর, নীলফামারী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব ফরিদা আখতার। এসময় তিনি আঞ্চলিক কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন।পাশাপাশি আঞ্চলিক কেন্দ্রে একটি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আঞ্চলিক কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করে।
আঞ্চলিক কেন্দ্র উদ্বাধন শেষে শহরের ইকু হেরিটেজ রিসোর্স সেন্টারের হলরুমে কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব জনাব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান এবং উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র। আর কর্মশালাটিতে সভাপতিত্ব করেন,বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক।বেলা এগারোটায় সৈয়দপুরের ইকু হেরিটেজ হোটেল এন্ড রিসোর্ট সেন্টারে পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে কর্মশালাটি শুরু হয়। শুরুতেই অনুষ্ঠানে আগত আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন,এবং কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন,বিএলআরআই এর পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দপ্তর প্রধান এবং পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার।
এসময় তিনি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের পটভূমি, প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং কেন্দ্রের চলমান উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।এরপর আমন্ত্রিত অতিথিরা একে একে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব ফরিদা আখতার বলেন,মানুষের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।সেই সাথে দেশীয় মুরগির গবেষণা করা দরকার।গ্রামীণ অঞ্চলে মা-বোনদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ছোট আকারে খামার তৈরি হবে এবং সংসারের হাল ধরতে পারবে।
সবমিলিয়ে উত্তর অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।প্রসঙ্গ, বৃহত্তর রংপুর বিভাগ ও এই অঞ্চলের পোল্ট্রি খামারি, উদ্যোক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এবং এই অঞ্চেলের প্রাণিসম্পদ গবেষণা কার্যক্রমকে বেগবান করার লক্ষ্যে সৈয়দপুর, নীলফামারী আঞ্চলিক কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।সৈয়দপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রটি জেলা শহর নীলফামারী থেকে ২৩.৭ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রায় ০৮.০০ একর জায়গার উপরে স্থাপিত হয়েছে।ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউটের চলমান “পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ” শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে বিগত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর; প্রধান ফটক; অফিস কাম ল্যাবরেটরি ভবন; আরসিসি কার্পেটিং রোড; পোল্ট্রির জন্য ব্রুডার, গ্রোয়ার ও লেয়ার শেড; বায়োগ্যাস প্লান্ট; ১৫০ কেভিএ সাবস্টেশন ও সোলার সিস্টেম ইত্যাদিসহ সহায়ক বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।নতুনভাবে স্থাপিত এই আঞ্চলিক কেন্দ্রটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় বিধায় এখানও এখানে রাজস্ব খাতের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ/ন্যস্ত করা হয়নি।
তবে কেন্দ্রটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য “পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পিএইচডি এবং এমএস ফেলো গবেষকগণ এখানে কাজ করে যাচ্ছেন।পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত সহায়ক জনবলও এখানে সংযুক্ত রয়েছে।বর্তমানে আঞ্চলিক কেন্দ্রটিতে প্রকল্পের আওতায় বিএলআরআই এর ৪ টি উন্নত বিদেশি পোল্ট্রির জাত, যথা- হোয়াইট লেগহর্ন,রোড আইল্যান্ড রেড, হোয়াইট রক ও ব্যারেড প্লাইমাউথ রক এবং রাজহাঁসের ২ টি ভ্যারাইটি, যথা- হোয়াইট এবং গ্রে ইত্যাদিসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ১৯০০ বার্ড সংরক্ষিত আছে এবং উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে।আঞ্চলিক কেন্দ্রটির শুরু থেকেই পোল্ট্রি জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও উন্নয়ন,খামারি প্রশিক্ষণ,বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তা দূরীকরণের জন্য খামারিদের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়ে আসছে। এছাড়াও পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ১৮ টি ব্যাচে প্রায় ৩৫০০ জন খামারি/উদ্যোক্তা’কে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।অনুষ্ঠানের সভাপতি ড.শাকিলা ফারুক এর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।