গোলাম রব্বানী শিপন, মহাস্থান- বগুড়া: টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মর্ডান মোড় পর্যন্ত ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়ক (সাসেক-২) এর আওতাধীন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। টাঙ্গাইল এলেঙ্গা তথা রংপুরের সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় বাসষ্ট্যাণ্ডের সুপ্রশস্ত রাস্তার মধ্যে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন রেখেই রাস্তাটি তৈরী করা হয়েছে। সড়কের মধ্যে ভবনটির জমি আগে অধিগ্রহণ না করায় এবং ভবনের মালিক তার জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় মহাসড়কের মাঝে দৃশ্যমান ভবনটি রেখেই রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। মহাস্থান সড়কের মাঝখানে দৃশ্যমান এ ভবনটি চালক- পথচারী ও এলাকাবাসীদের যেন এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে।
রবিবার (১জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়ক উন্নীতকরণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ সাসেক করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর ও সার্ক হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ। এ মহাসড়কটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সাসেক সংযোগ প্রকল্প – ২’ এর কাজ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সারাদেশের সাথে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র স্থল বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের মহাসড়কের মাঝে রয়েই গেছে একটি দ্বিতল ভবন। দেশ বা রাষ্ট্র উন্নয়নের জন্য সবাই সরকারকে রাস্তার জন্য জমি দিয়ে দেয় এজন্য সরকার তাদের ক্ষতিপূরণও দিয়ে দেন।
কিন্তু মহাস্থান আন্ডারপাস সংলগ্ন আলহাজ্ব আব্দুল জলিল ও মুনছুর রহমান নামের ব্যক্তিদের ২ তলা ভবন মহাসড়কের মাঝখান থেকে এখনও সড়ানো হয়নি। ফলে দেখা যায় চার লেনের রাস্তাটির মাঝে ১ লেনের ভিতরে ভবনটি রাস্তার মধ্যে রেখেই বাকি অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে৷ এ কারনে ফুটপাত এ অংশে সংকুচিত হয়েছে। ভবনটির জন্য প্রতিনিয়ত রাস্তা দিয়ে যেমন যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ফুটপাত দিয়েও হাঁটাচলায় সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা।
এ রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী মহাস্থান বাসষ্ট্যাণ্ডের বিসমিল্লাহ হোটেলের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব আজমল হোসেন বলেন, ‘রাস্তার মধ্যে দ্বি-তলা ভবনের এমন ঘটনা মনে হয় দেশে এই প্রথম। রাস্তাটি মাঝখানে ভবন থাকায় গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। নিয়মিত যানবাহন না চলার কারনে এখানে শতশত দোকানপাট ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। এখানে সাত সম্মুখ আন্ডারপাস তৈরী হলেও ভবনের বিস্তীর্ণ এক পাশ দিয়ে কোনমতে বগুড়া লেনে চলছে যানবাহন।
‘গাড়ির চাপ বেশি থাকলে এ অংশে যানজট লেগে যায়। এ ভবনের মালিক আলহাজ্ব আব্দুল জলিল বলেন, ৬ ধারা নোটিশ পেয়েছি। ৭ ধারা নোটিশের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ অনুযায়ী টাকা দিলে আমরা সড়িয়ে নিব।
সড়কটির পাশেই অদূরে রয়েছে উত্তর বঙ্গের বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ সুলতান বলখী (রহঃ) এর মাজার শরীফ সহ মহাস্থান জাদুঘর, মসলা গবেষণা, সরকারী বেসরকারি ব্যাংক, বীমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যাতায়াতের সুবিধা না থানায় এ সব প্রতিষ্ঠানের অনেককেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুধু তাই নয়, এ ভবনের কারনে বাস চলাচল বা যাত্রীদের বাসে ওঠানামার করতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ লেন বন্ধ থাকায় মহাস্থান বাসষ্ট্যাণ্ডও নেই। ফলে যত্রতত্র বাসে ওঠা নামা করতে গিয়ে ২ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এখানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, এটি সাসেক এর আওতায় কাজ চলছে। ওই ভবন গুলো অধিগ্রহণের টাকা দ্রুত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমির মালিকদের দেওয়া হবে। তারপরেই ভবনটি সড়িয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা হবে।
ভবনটি দ্রুত সড়িয়ে মহাসড়কের এ রাস্তাটি নির্মাণ করে চলাচলে স্বাভাবিক করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।