English

32 C
Dhaka
শনিবার, মে ৪, ২০২৪
- Advertisement -

জমি বিক্রির ৭ লাখ টাকায় এলাকায় রাস্তা করে দিলেন কৃষক

- Advertisements -
Advertisements

সাধারণ মানুষের চলাচলে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে জমি বিক্রির সাত লাখ টাকায় ১২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি রাস্তা নির্মাণ করেছেন কামাল হোসেন নামের পটুয়াখালীর কলাপাড়ার এক কৃষক।

Advertisements

উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে প্রায় ১৫ দিন ধরে স্কেভেটর ও শ্রমিক দিয়ে তিনি রাস্তাটি নির্মাণ করেন।

সাধারণ জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে পুরো এলাকা তলিয়ে যাওয়া, লবণাক্তায় ফসল নষ্ট হওয়া, ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে না যেতে পারা, অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে না নিতে পারাসহ নানান সমস্যার একমাত্র কারণ ছিল রাস্তাটি না থাকা। নিজের চোখে এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ওই কৃষক প্রতিজ্ঞা করেন জমি বিক্রি করে হলেও রাস্তাটি নির্মাণ করবেন। অবশেষে কথাও রেখেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিয়নে জোয়ারের পানিতে আড়াইশ পরিবার তালিয়ে যেতো।এছাড়া ত্যাগাছিশা খেয়াঘাট, ডালবুগঞ্জ, ধুলাস্বার, কলাপাড়া শহর, বালিয়াতলীর স্কুল-কলেজের যাতায়াতের একমাত্র সহজ পথ ছিল এটি। যে কারণে ওই সড়ক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হতো কৃষকসহ সাধারণ মানুষের। মানুষের এসব দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন কৃষক কামাল হোসেন।

১২০০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১৪ ফুট প্রস্থ ও ১৪ ফুট উঁচু এ রাস্তাটি নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। এ কাজে স্থানীয়রাও শ্রমিক হিসেবে সহযোগিতা করেছেন। ব্যয় হওয়া পুরো টাকা কৃষক কামাল হোসেন নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে সংগ্রহ করেন।

কুমিরমারা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হওলাদার বলেন, ‘এখানে ছোট্ট একটি রাস্তা ছিল যেটা দিয়ে দুজন লোক হাঁটা যেতো না। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলেও নিতে পারতাম না। এছাড়া জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সবই তলিয়ে থাকতো। আমরা বারবার মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিয়েছি। এমনকী মানববন্ধন করেও রাস্তাটি নির্মাণ করাতে পারিনি। পরে কৃষক কামাল হোসেন রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি।’

একই এলাকার কুদ্দুস খান বলেন, ‘এখান থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে গর্ভবতী মায়ের বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষি মালামাল নিয়ে চলাচলে খুবই সমস্যায় পড়তে হতো আমাদের। নিজের টাকা দিয়ে এরকম রাস্তা বানানোর মহানুভবতা অনেক কম দেখেছি।’

জানতে চাইলে কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ‘কয়েকমাস আগে এ রাস্তা না থাকার কারণে এক মা সন্তান জন্ম দেন বিলের মধ্যে। এলাকার ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছিল না। সবমিলিয়ে কয়েক এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই আল্লাহর কাছে সহযোগিতা চেয়েছি আর নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞা করেছি নিজের টাকায় হলেও রাস্তা করবো। পরে আমার নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করে দেই। তবে রাস্তার বাকি অংশের কাজ করার জন্য আরও টাকা দরকার।’

নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, কৃষক কামাল হোসেন যে মহতী কাজ করেছেন এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, কৃষকের এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে ওখানে রাস্তা হওয়ার কারণে দুপাশের পানি ওঠানামার জন্য একটি কালভার্ট অপরিহার্য হয়ে গেছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন তাদের এ কালভার্ট নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতা করবো।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন