বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিয়োগদাতা, নিজেদের শীর্ষ নির্বাহীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ লাখের বেশি মানুষের কাজ রোবটের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করার পথে হাঁটছে বলে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রের ধরন বদলে দেওয়া এই কোম্পানিটির কর্মী রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। কোম্পানির অটোমেশন টিমের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে রোবট ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নিলে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এড়ানো যাবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি পণ্য প্যাকেজ ও সরবরাহে এতে প্রায় ৩০ সেন্ট সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোম্পানির রোবোটিকস বিভাগ দীর্ঘ মেয়াদে তাদের মোট কার্যক্রমের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অটোমেট করার লক্ষ্য স্থির করেছে। তবে নথিতে দেখা যায়, কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় কোম্পানি ‘অটোমেশন’ বা ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শব্দগুলো এড়িয়ে চলে, বরং ‘উন্নত প্রযুক্তি’ বা ‘কোবট’ (collaborative robot) শব্দ ব্যবহার করতে চায়, যা মানব-রোবট সহযোগিতার ভাবনা প্রকাশ করে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও এমআইটির অধ্যাপক ড্যারন আসিমোগলু বলেন, অ্যামাজনের মতো করে অটোমেশনকে কাজে লাগানোর এমন বড় প্রণোদনা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। তার মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ নিয়োগদাতা কোম্পানিটি পরিণত হবে চাকরিনাশক প্রতিষ্ঠানে, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান নয়।’
এদিকে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর দেখা নথিগুলো অসম্পূর্ণ এবং কোম্পানির সামগ্রিক নিয়োগনীতিকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না বলে মন্তব্য করেছে অ্যামাজন। কোম্পানির মুখপাত্র কেলি ন্যানটেল বলেন, চলতি ছুটির মৌসুমে অ্যামাজন ২ লাখ ৫০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। অ্যামাজনের বিশ্বব্যাপী পরিচালন বিভাগের প্রধান উদিত মাদান বলেন, ‘একটি অংশে দক্ষতা বৃদ্ধিই পুরো প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে না। এটি কোনো নির্দিষ্ট কমিউনিটি কিংবা পুরো দেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা দেখতে হবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে।’
মানুষের কাজ বা মজুরির ওপর রোবটের প্রভাব নিয়ে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় একটি রোবট ১ হাজার কর্মীর কাজ করেছে এবং এতে ওই কোম্পানির মজুরির পেছনে খরচ হ্রাস হয়েছে ০.৪২ শতাংশ। একইসঙ্গে এতে ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হয়েছে। পাঁচ বছর পর ২০২৫ সালে এসে অনেক কোম্পানি মজুরির পেছনে খরচ কমাতে রোবটে বিনিয়োগ করছে।
অন্যদিকে, অ্যামাজন এক ই-মেইল বার্তায় গণমাধ্যম সি-নেট-কে জানিয়েছে, ‘কর্মসংস্থান তৈরিতে আমাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবেই থাকবে, বিশেষ করে উচ্চ বেতনের পদের জন্য।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র কয়েকটি কোম্পানির বেতনভুক্ত ৬ লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যার মধ্যে ডেলিভারি কোম্পানি ফেডেক্সের আনুমানিক ৫ লাখ ৫০ হাজার কর্মচারী রয়েছেন।
