English

26 C
Dhaka
শুক্রবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৫
- Advertisement -

১৬ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হবে অবৈধ মোবাইল ফোন, যেভাবে জানবেন বৈধ কি না

- Advertisements -

দেশে আসছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা, এর মাধ্যমে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগের লক্ষ্য অবৈধভাবে আমদানি ও ক্লোন আইএমইআইযুক্ত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় কেবল অনুমোদিত, মানসম্মত ও বৈধভাবে আমদানি করা ফোনই দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারবে। অবৈধ বা ক্লোন আইএমইআই নম্বরযুক্ত ফোন নেটওয়ার্কে আর কাজ করবে না।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে দেশের ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটে অবৈধ ডিভাইস ও সিম ব্যবহার করে। এনইআইআর চালুর মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে।

তিনি আরও জানান, অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কারণে প্রতিবছর সরকারের ৫০০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়। তাই এই ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজস্ব সুরক্ষা সম্ভব হবে, অন্যদিকে ডিজিটাল প্রতারণা ও অপরাধও কমবে।

বিটিআরসি জানিয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর থেকে মোবাইল ফোন কেনার আগে ক্রেতাদের অবশ্যই ফোনের আইএমইআই নম্বর যাচাই করে বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। বৈধ ফোন ক্রয়ের পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

যেভাবে জানবেন মোবাইল ফোনটি বৈধ কি না

ধাপ-১: মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD <space> ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখুন। উদাহরণস্বরূপ KYD 123456789012345।

ধাপ-২: আইএমইআই নম্বরটি লেখার পর ১৬০০২ নম্বরে পাঠিয়ে দিন।

ধাপ-৩: ফিরতি বার্তার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোনের নিবন্ধন

বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোন প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। এসএমএস’র মাধ্যমে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে। দাখিল করা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর শুধু বৈধ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে সচল হবে।

বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল ফোন নিবন্ধনের উপায়

ধাপ-১: neir.btrc.gov.bd পোর্টাল ভিজিট করে আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করুন।

ধাপ-২: পোর্টালের ‘Special Registration’ সেকশনে গিয়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর দিন।

ধাপ-৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ছবি/স্ক্যান কপি (পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশন, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি) আপলোড করুন। এরপর সাবমিট বাটনে চাপ দিন।

ধাপ-৪: মোবাইল ফোনটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসেবা বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সাহায্যেও এই সেবা নেওয়া যাবে। যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা (ব্যাগেজ রুলস নামে পরিচিত) অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশের নেটওয়ার্কে আগে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত একটি বাদে সর্বোচ্চ একটি মোবাইল ফোন বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। আর শুল্ক দিয়ে আরও একটি মোবাইল ফোন আনতে পারবেন।

বিশেষ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি

১. পাসপোর্টে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতার স্ক্যান বা ছবি।

২. পাসপোর্টে ইমিগ্রেশনের দেওয়া আগমনের সিল–সংবলিত পাতার স্ক্যান বা ছবি।

৩. ক্রয় রসিদের স্ক্যান বা ছবি।

৪. কাস্টমস শুল্ক পরিশোধসংক্রান্ত প্রমাণপত্রের স্ক্যান বা ছবি (একটি মোবাইল ফোনের বেশি হলে)।

উপহার পাওয়া মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে

১. পাসপোর্টে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতার স্ক্যান বা ছবি।

২. পাসপোর্টে ইমিগ্রেশনের দেওয়া আগমনের সিল-সংবলিত পাতার স্ক্যান বা ছবি।

৩. কাস্টমস শুল্ক পরিশোধসংক্রান্ত প্রমাণপত্রের স্ক্যান বা ছবি (একটি হ্যান্ডসেটের বেশি হলে)।

৪. ক্রয় রসিদের স্ক্যান বা ছবি।

৫. উপহার প্রদানকারীর প্রত্যয়নপত্র (শুধু উপহার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে)।

এয়ার মেইলে পাওয়া মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে

১. প্রেরকের পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা বা জাতীয় পরিচিতির স্ক্যান বা ছবি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

২. প্রাপকের জাতীয় পরিচিতির স্ক্যান বা ছবি।

৩। ক্রয় রসিদের স্ক্যান বা ছবি।

৪। শুল্ক প্রদানের রসিদের স্ক্যান বা ছবি (একটি হ্যান্ডসেটের বেশি হলে)।

ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের বর্তমান অবস্থা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া

বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত সব হ্যান্ডসেট আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। ১৬ ডিসেম্বরের আগে ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট আলাদাভাবে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। ব্যবহৃত হ্যান্ডসেটের বর্তমান অবস্থা নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করে জানা যাবে—

ধাপ-১: হ্যান্ডসেট থেকে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করুন।

ধাপ-২: অটোমেটিক বক্স এলে হ্যান্ডসেটের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে পাঠিয়ে দিন।

ধাপ-৩: ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে ব্যবহৃত হ্যান্ডসেটের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।

তবে neir.btrc.gov.bd পোর্টাল অথবা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সাহায্যেও উল্লিখিত সেবা গ্রহণ করা যাবে।

নিবন্ধিত মোবাইল ফোন ডি-রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়া

১৬ ডিসেম্বর থেকে গ্রাহকের ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট বিক্রি বা হস্তান্তরের প্রয়োজন হলে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করে তা করা যাবে। ডি-রেজিস্ট্রেশন করার সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) শেষের চার ডিজিট দিতে হবে। গ্রাহকের ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট নিচের মাধ্যমগুলোর সাহায্যে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে—

(ক) সিটিজেন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd)
(খ) এমএনও পোর্টাল
(গ) মোবাইল অ্যাপস
(ঘ) ইউএসএসডি চ্যানেল (*১৬১৬১#)

ডি-রেজিস্ট্রেশনের শর্ত

(ক) ডি-রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রাহকের হ্যান্ডসেটে ব্যবহৃত সিম অবশ্যই নিজ এনআইডিতে নিবন্ধিত হতে হবে।

(খ) ক্লোন বা ডুপ্লিকেট আইএমইআই–সংবলিত হ্যান্ডসেটটি ডি-রেজিস্ট্রেশন করার সময় অতিরিক্ত তথ্য হিসেবে পরবর্তী ব্যবহারকারীর সিম নম্বর দিতে হবে।

করপোরেট সিম ব্যবহারকারী গ্রাহকের ক্ষেত্রে ডি-রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া

করপোরেট সিম ব্যবহারকারীদের ৩০ দিনের মধ্যে ইউএসএসডি চ্যানেল বা সিটিজেন পোর্টালের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এনআইডির তথ্য দেওয়ার জন্য এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করা হবে।

বর্ণিত তথ্য জমা সাপেক্ষে ব্যক্তিগত এনআইডি বা কি-কন্টাক্ট-পয়েন্টের (কেসিপি) এনআইডি দিয়ে ডি-রেজিস্ট্রেশন সুবিধা নেওয়া যাবে। অন্যথায় শুধু কি-কন্টাক্ট-পয়েন্টের এনআইডির তথ্য দিয়ে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

চুরি বা হারালে ব্লক করার প্রক্রিয়া

গ্রাহকের ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে সিটিজেন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd)/মোবাইল অ্যাপস বা মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসেবাকেন্দ্র থেকে যেকোনো সময়ে লক বা আনলক করা যাবে।

যেসব গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাঁদের এনইআইআর সেবা নেওয়ার প্রক্রিয়া
মুঠোফোন গ্রাহক ইউএসএসডি চ্যানেল বা এনইআইআরের (neir.btrc.gov.bd) সিটিজেন পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপস বা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এনইআইআর সিস্টেমের সেবা নিতে পারবেন। তবে যেসব গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাঁরা ইউএসএসডি চ্যানেল বা ১২১ ডায়াল করে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে এনইআইআর সেবা নিতে পারবেন।

মোবাইল ফোন উৎপাদন বা আমদানির ক্ষেত্রে করণীয়

বর্তমানে কমিশনে নিবন্ধিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেশের চাহিদার বেশির ভাগ হ্যান্ডসেট উৎপাদন করে। এ ছাড়া কমিশনে নিবন্ধিত ভেন্ডর অল্প কিছু মডেলের (যেগুলো দেশে উৎপাদন সম্ভব নয়) হ্যান্ডসেট আমদানি করে। হ্যান্ডসেট উৎপাদন বা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হলো—

(ক) কমিশনের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী হ্যান্ডসেট উৎপাদন বা আমদানি করতে হবে।

(খ) উৎপাদন বা আমদানি করা হ্যান্ডসেট বাজারজাতকরণের আগে আইএমইআই নির্দিষ্ট ফরম্যাটে কমিশনে জমা দিতে হবে।

(গ) বাজারজাতকরণের আগে আইএমইআই কমিশনে জমা না দিলে বৈধভাবে উৎপাদন বা আমদানি করা হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারবে না।

মোবাইল ফোন বিক্রেতার ক্ষেত্রে করণীয়

হ্যান্ডসেট বিক্রির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত হলো—

(ক) উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক থেকে মোবাইল ফোনের ডেলিভারি নেওয়ার আগে আইএমইআই যাচাই করতে হবে।

(খ) ভুয়া বা নকল আইএমইআই যুক্ত মোবাইল ফোন (যেগুলো বিটিআরসির ডেটাবেজে নেই) বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এই হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারবে না।

এনইআইআরের যেকোনো বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে করণীয়এনইআইআর-সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে বিটিআরসির হেল্প ডেস্ক নম্বর (১০০) অথবা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে (১২১) ডায়াল করতে হবে। এ ছাড়া অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকেও তথ্য জানা যাবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/a90c
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন