কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন শুধু প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই নয়—ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই-মেইল, গবেষণাপত্র কিংবা পত্রিকার কলাম লেখাতেও ব্যবহার হচ্ছে এআই। এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ, অনেক মডেলই এমনভাবে লেখা তৈরি করে যা দেখতে প্রায় মানুষের লেখার মতো। ফলে পাঠকের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে, কোন লেখা মানুষ লিখেছে, আর কোনটা এআই।
তবে কিছু বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা সম্ভব—লেখাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কি না। নিচে এমন কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা লেখার ভেতরেই আভাস দেয় লেখকের পরিচয়—মানুষ না মেশিন।
অতিরিক্ত এম ড্যাশের ব্যবহার
এআই টুলগুলো সাধারণত বইয়ের ভাষা অনুকরণ করে, যেখানে এম ড্যাশ (—) ব্যবহার বেশি দেখা যায়। দৈনন্দিন বা প্রাতিষ্ঠানিক লেখায় এটি খুব কম ব্যবহৃত হয়। তাই কোনো লেখায় যদি এম ড্যাশের অপ্রয়োজনীয় ও বারবার ব্যবহার দেখা যায়, তবে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শব্দচয়নে যান্ত্রিকতা ও পুনরাবৃত্তি
এআই মডেল একই ধরনের শব্দ, বাক্যগঠন ও সংযোগকারী শব্দ বারবার ব্যবহার করে থাকে। যেমন—’অতএব’, ‘ফলস্বরূপ’, ‘এছাড়া’ ইত্যাদি। একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে বাক্য সাজানো ও একই শব্দগুচ্ছ পুনরাবৃত্তির প্রবণতা থেকেও এআই লেখা শনাক্ত করা সম্ভব।
বিশ্লেষণের অভাব, তথ্যের আধিক্য
মানুষ সাধারণত নিজস্ব মত, অভিজ্ঞতা ও ভাবনা থেকে লেখা তৈরি করে, যেখানে তথ্যের পাশাপাশি ব্যাখ্যা বা দৃষ্টিভঙ্গিও থাকে। কিন্তু এআই মূলত তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনায় দক্ষ হলেও সেই তথ্যের পেছনের প্রেক্ষাপট, বিশ্লেষণ বা ভাবনার গভীরতা দিতে পারে না। ফলে এআইয়ের লেখা পড়ে অনেক সময় ‘খোলস আছে, কিন্তু প্রাণ নেই’ মনে হয়।
মানবিক স্পর্শের অনুপস্থিতি
মানুষের লেখা সাধারণত অভিজ্ঞতা, আবেগ, কল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির মিশেলে গঠিত। কিন্তু এআই এই মানবিক গুণাবলি ফুটিয়ে তুলতে পারে না। সে কারণে কোনো লেখা যদি নিরপেক্ষ, আবেগহীন বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাশূন্য হয়—তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে লেখা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
এ ছাড়া, এআই মাঝে মাঝেই এমন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করে, যেগুলো ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের মুখের ভাষার সঙ্গে মেলে না। এসবও চিনে নেওয়ার একটি পদ্ধতি।
বাস্তব উদাহরণ
এ বিষয়ে একটি পরীক্ষাও করা যেতে পারে। নিচে দুটি অনুচ্ছেদ দেওয়া হলো—
ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।
পাঠকেরা প্রথমে ভাবতে পারেন, একটি লেখা মানবসৃষ্ট এবং অন্যটি এআই দিয়ে তৈরি। কিন্তু মজার বিষয় হলো—উভয় লেখাই তৈরি হয়েছে গুগলের জেমিনি এআই ব্যবহার করে।
সুতরাং, এআই দিয়ে লেখা চিনতে শুধু উপরের বৈশিষ্ট্যগুলো জানলেই চলবে না; নিজের বিশ্লেষণ ক্ষমতা, পাঠ্যবস্তুর প্রাসঙ্গিকতা এবং মানবিক উপলব্ধিও বিবেচনায় রাখতে হবে। লেখার গভীরতা, স্বাভাবিক শব্দচয়ন ও অনুভূতির উপস্থিতি যাচাই করেই কৃত্রিমতা ধরা সম্ভব।