মহাকাশ মানেই অসংখ্য অমীমাংসিত রহস্য। সম্প্রতি তেমনই এক পিলে চমকানো রহস্যের সন্ধান পেয়েছেন নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের একদল বিজ্ঞানী।
ওয়াশিংটনের ‘কার্নেগি আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটস ল্যাবরেটরি’র গবেষক ও গবেষণার সহ-লেখক পিটার গাও বলেছেন, আমার স্পষ্ট মনে রয়েছে, এ গবেষণার বিভিন্ন তথ্য হাতে পাওয়ার পর আমাদের সবার প্রতিক্রিয়া ছিল, এ কী কাণ্ড! বিয়য়টি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে একেবারেই আলাদা।
‘পিএসআর জে২৩২২-২৬৫০বি’ নামের নতুন এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা, যা এক ‘পালসার’ তারাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পালসার ছোট হলেও খুব ঘন তারা, যা থেকে নিয়মিত তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ বেরিয়ে আসে। বিষয়টিকে ‘ব্ল্যাক উইডো’ সিস্টেম বলে, যেখানে দ্রুত ঘূর্ণায়মান এক পালসার তার আশপাশে থাকা ছোট কোনো জ্যোতিষ্কের সঙ্গে জোড়ায় অবস্থান করে।
এ সিস্টেমের ‘ব্ল্যাক উইডো’ নামকরণের কারণ হচ্ছে, এক বিশেষ প্রজাতির মাকড়সা মিলনের পর পুরুষ মাকড়সাটিকে খেয়ে ফেলে নারী মাকড়সা, তেমনই এ তারা জুটিও নিজেদের শক্তিশালী বিকিরণ দিয়ে পাশের গ্রহ বা তারাটিকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে।
মহাকাশে ‘ব্ল্যাক উইডো’ জুটি খুব বিরল না হলেও এই নির্দিষ্ট জোড়াটি ওই ভিনগ্রহের তৈরি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে নতুন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত কোনো গ্রহের টিকে থাকার কথা নয়। গ্রহটি কীভাবে তৈরি হয়েছে, এমনকি টিকেও রয়েছে সেটিই বিজ্ঞানীদের কাছে বড় ধাঁধা বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেট। পালসার তারাটির খুব কাছে থাকায় এর প্রচণ্ড মহাকর্ষীয় টানের প্রভাবে গ্রহটি বিকৃত হয়ে লম্বাটে লেবুর আকৃতি ধারণ করেছে। তবে বিস্ময়কর বিষয় হল ‘পিএসআর জে২৩২২-২৬৫০বি’ গ্রহটির বায়ুমণ্ডল মূলত হিলিয়াম ও কার্বন দিয়ে গঠিত।
‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র অধ্যাপক ও এ গবেষণার প্রধান গবেষক মাইকেল ঝাং বলেছেন, “একটি ভিনগ্রহে সাধারণত আমরা পানি, মিথেন বা কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো যেসব অণু দেখার আশা করি তার বদলে এ গ্রহটিতে আণবিক কার্বন পেয়েছি আমরা।”
এই অদ্ভুত বায়ুমণ্ডলের কারণে গ্রহটি আসলে কীভাবে তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে গবেষক দলটি নিশ্চিত হতে পারছে না। ঝাং বলেছেন, এত বিপুল পরিমাণ কার্বনওয়ালা গঠন কীভাবে তৈরি হতে পারে তা কল্পনা করাও কঠিন। এখন পর্যন্ত আমাদের জানা গ্রহ তৈরির সব তত্ত্বকেই নাকচ করে দিচ্ছে এই ভিনগ্রহ। আপাতত, নতুন ভিনগ্রহটিকে মহাবিশ্বের আরেকটি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
