ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ওয়েন রুনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এক মৌসুমে ৩৪ গোল করেছিলেন। দীর্ঘদিন পর এসে তিনি জানালেন, ওই মৌসুমে গোল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তিনি। গোল করতে করতে ‘বিরক্ত’ অনুভব করতেন। কারণ, গোল করার চেয়ে তিনি বেশি পছন্দ করতেন মাঠে নেমে খেলার গতি, পাস ও পরিকল্পনায় যুক্ত থাকতে।
‘আমি শুধু গোল করতে চাইনি, খেলাটা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম’- বলছিলেন রুনি। ৪০ বছর বয়সী এই ইংলিশ ফুটবলার বিবিসি স্পোর্টের ‘দ্য ওয়েন রুনি শো’-তে আরও বলেন, ‘আমি যখন নাম্বার ৯ পজিশনে খেলতাম, তখন দুই মৌসুমে ৩৪টি করে গোল করেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ম্যাচ শেষে মাঠ থেকে নামতাম, গোল করতাম, দল জিতত — কিন্তু নিজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতাম না। আমি খেলায় আরও জড়িত থাকতে চাইতাম।’
রুনি জানান, তার আসল আনন্দ ছিল বল পাস করা, খেলা তৈরি করা, মাঝমাঠে নেমে খেলার ছন্দ গড়ে তোলা — শুধুমাত্র গোল করার মধ্যে নয়।
রুনি ২০০৪–২০১৭ পর্যন্ত ১৩ বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলেছেন, মোট ৫৫৯ ম্যাচে ২৫৩ গোল করেছেন— যা ক্লাব ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তিনি ১৬ বছর বয়সে এভারটন থেকে উঠে এসে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন।
২০০৯ সালে যখন তাকে একমাত্র নাম্বার নাইন হিসেবে খেলানো হয়, তখন তিনি সব প্রতিযোগিতায় ৩৪ গোল করেছিলেন — এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে ২৬টি ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছিল ৫টি। দুই বছর পর আবারও তিনি সেই একই কীর্তি গড়েন। এবারও করলেন ৩৪ গোল। এবার প্রিমিয়ার লিগে ২৭টি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৫টি।
তবে এত বিশাল অর্জনের পরও রুনির মুখে ছিল ভিন্ন কথা — ‘গোল করা দারুণ, কিন্তু আমি চেয়েছিলাম মাঠে আরও অংশ নিতে, দলের সঙ্গে খেলতে, বল পেতে, পাস দিতে। শুধু গোল করাটা আমার কাছে যথেষ্ট ছিল না।’
তার পছন্দের পজিশন কী ছিল? জানতে চাইলে রুনি বলেন, নাম্বার ১০। তিনি জানান, তার প্রিয় পজিশন সবসময়ই ছিল নাম্বার ১০, অর্থাৎ স্ট্রাইকারের ঠিক পেছনে খেলাটা।
‘আমি সব জায়গায় খেলতে পছন্দ করতাম। ডান, বাম বা মাঝমাঠে। তবে যখন আমি নাম্বার ১০ হিসেবে খেলতাম, তখন নিজেকে সবচেয়ে কার্যকর মনে হতো। অনেক সময় কোচ বলতেন, আরও সামনে যাও। কিন্তু আমি বুঝতাম, এই মুহূর্তে দলের প্রয়োজন আমি পেছনে থেকে খেলাটা গড়ে দিই।’
রুনি তার বহুমুখী খেলার দক্ষতার জন্য প্রায়ই স্ট্রাইকার, নাম্বার ১০ এমনকি মাঝমাঠেও খেলেছেন।
যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ইউনাইটেডে খেলার সময় কোন ফরোয়ার্ডের সঙ্গে খেলতে সবচেয়ে উপভোগ করেছেন, রুনি এক মুহূর্ত দেরি না করে বলেন, ‘তেভেজ। আমি কার্লোস তেভেজের সঙ্গে খেলতে ভীষণ উপভোগ করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন পত্রিকাগুলো লিখেছিল আমরা দুজন একসঙ্গে খেলতে পারব না, কারণ আমরা খুবই একই ধাঁচের। কিন্তু সেটা আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করেছিল। আমরা মাঠে একে অপরের জন্য লড়েছি, কখনো একজন নাম্বার ৯, অন্যজন নাম্বার ১০। আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল নিখুঁত।’
ইংল্যান্ডের জার্সিতে রুনি ১২০ ম্যাচে ৫৩ গোল করেছেন। যা এখনো দেশের সর্বোচ্চ গোলসংখ্যার মধ্যে অন্যতম। একসময় শীর্ষে ছিলেন। এখন তাকে পেছনে ফেলে হ্যারি কেইন সর্বোচ্চ গোলদাতা (১০০ ম্যাচে ৬৮টি)। রুনি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়ও।
ওয়েন রুনির এই মন্তব্য তার ফুটবল দর্শনকে আরও পরিষ্কার করে। তিনি কেবল গোলদাতা ছিলেন না, বরং একজন সম্পূর্ণ ফুটবলার, যিনি খেলাটিকে উপভোগ করতে চাইতেন নিজের মতো করে। ‘আমি সবসময় বলের কাছে থাকতে চেয়েছি’- রুনির এই এক বাক্যই যথেষ্ট বোঝাতে, কেন তিনি ছিলেন অনন্য।
