গেল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া ফ্রেঞ্চ ওপেনের নারী এককের প্রথম রাউন্ডে ম্যাচটা স্বাগতিক এক টেনিস তারকাকে হারিয়ে জিতেছিলেন ব্রিটিশ টেনিস সুন্দরী কেটি বোল্টার। সেটিও প্রথম সেটে টাইব্রেকারে হারের পর কঠিন এক লড়াই শেষে দুই সেটে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নিয়েছিল, যা তার জন্য ছিল বেশ আনন্দের, তবে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের ইনবক্সে ঢুকতেই বোল্টারের সামনে খুলে যায় এক বিভীষিকার দরজা। ইনস্টাগ্রামে তাকে দেওয়া হুমকির মেসেজগুলো ছিল ঠিক এ রকম, ‘আশা করি ক্যানসারে মরবে।’, ‘তোমার দাদির কবর খুঁড়ে ফেলবো, যদি কালকের মধ্যে মারা না যান।’, ‘মরে যাও, আমার মায়ের পাঠানো টাকা তোমার কারণে উড়ে গেছে।’
ব্রিটিশ টেনিস তারকা কেটি বোল্টার হয়তো জীবনের সেরা ম্যাচগুলোর একটি খেলেছিলেন প্যারিসের কোর্টে। ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ডে প্রথম সেটের টাইব্রেকারে হেরে গেলেও পরের দুই সেটে দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নেন ৬-৭, ৬-১, ৬-১ স্কোরলাইনে। সেটাই ছিল তার রোলাঁ গারোর মূল পর্বে প্রথম জয়। কিন্তু সেই আনন্দের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এক ‘অন্ধকার অধ্যায়’। মোবাইলে ঢুকতেই ইনবক্সে একের পর এক অশ্রাব্য গালিগালাজ, ব্যক্তিগত আক্রমণ, এমনকি পরিবারকে ঘিরে ভয়ংকর হুমকি। বোল্টারের নিজের কথায়-‘এসব এখন এত স্বাভাবিক হয়ে গেছে, যেন এটা আমার রুটিনের অংশ!’
সম্প্রতি বিবিসি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোল্টার যা বলেছেন, তা শুধু নিজের না এ যেন একটা প্রজন্মের ভয় আর বিষন্নতা। তিনি বলেন, ‘শুরুতে এগুলো খুব ব্যক্তিগতভাবে নিতাম। আতঙ্কে থাকতাম, মানসিকভাবে বেশ চাপ অনুভব করতাম। মাঝে মাঝে কান্না করতাম, ডিপ্রেশনে ভুগতাম। তবে ধীরে ধীরে এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন ভাবি এরা কারা? কীভাবে এত ঘৃণা তৈরি হয় একজন মানুষকে ঘিরে?’
তবে ব্রিটিশ এ টেনিস সুন্দরী এটাও জানেন, এর পেছনে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে বেটিংয়ের। যারা খেলায় বাজি ধরে যারা হেরে যায়, তাদের অনেকেই রাগ ঝাড়েন সরাসরি খেলোয়াড়দের ওপর। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালেই অন্তত ৮ হাজার হুমকিমূলক বার্তা এসেছে টেনিস খেলোয়াড়দের সামাজিক মাধ্যমে, যার প্রায় ৪০ শতাংশই এসেছে ‘রাগি জুয়াড়িদের’ কাছ থেকে।
একজন তো একবারেই ২৬৩টি হুমকির বার্তা পাঠিয়েছেন! এমন ১৫টি অ্যাকাউন্টের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তার মতো রয়েছে আরও হাজারও। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, এসব ‘ঘৃণা ব্যবসা’তে সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতিক্রিয়া প্রায় শূন্য। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা কোনো মন্তব্যই করেনি। অথচ বোল্টার জানাচ্ছেন, তার ইনবক্সের স্প্যামবক্সে প্রতিদিনই অশ্লীল ছবি পাঠানো হয়। তরুণীরা যারা এই পেশায় আসছে, তারা কীভাবে মানসিকভাবে সামলাবে এসব? যদিও তিনি মাঝেমধ্যে বিপরীত পথে হাঁটেন-অপমানকারীদের উত্তর দেন নম্রভাবে। সেই সময় অনেকে আবার জবাব দেন, ‘আমি আসলে তোমার বড় ভক্ত, আবেগে লিখে ফেলেছি।’
২৮ বছর বয়সী বোল্টারের বাগদত্তো অস্ট্রেলিয়ার টেনিস তারকা অ্যালেক্স ডি মিনর। তিনিও হুমকি পান তার হবু স্ত্রীর কারণে, আবার উল্টো ঘটনাও ঘটে। ডি মিনরের ম্যাচের হুমকি আসে ব্রিটিশ সুন্দরীর ইনবক্সে! যেন দুই খেলোয়াড় একসঙ্গে খেলছেন-তবে একপাশে টেনিস, অন্যপাশে ট্রল-টেনিস! আসন্ন উইম্বলডন সামনে রেখে বোল্টার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু সঙ্গে বাড়ছে মানসিক প্রস্তুতির চাপও। কারণ ঘরে খেলতে নামার মানে এখানে শুধু প্রতিপক্ষ নয়, ইনবক্সের হুমকি/আক্রমণাত্মক বার্তাগুলো যেন প্রতিদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী।