একসময় ব্যাট হাতে ঝড় তোলা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক আজ দাঁড়িয়ে আছেন ভিন্ন এক যুদ্ধক্ষেত্রে। প্রতিপক্ষ আর কোনো বোলার নন, প্রতিপক্ষ এখন জীবনসংহারী ক্যানসার। যে মানুষ একসময় ২২ গজে প্রতিপক্ষের চোখে আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন, আজ তার চোখেমুখে ভাসছে মৃত্যুভয়ের ছায়া।
২০০৬ সালে প্রথমবার আক্রান্ত হয়েছিলেন ত্বকের ক্যানসারে। চিকিৎসা, যত্ন আর বিশ্বাসের জোরে সেই লড়াই তিনি জিতে ফিরেছিলেন মাঠে। ভেবেছিলেন হয়তো ঝড় থেমে গেছে। কিন্তু ক্যানসারের ভয়াল ছায়া মাঝেমধ্যেই তাকে ঘিরে ধরে। গতকালও সেই অশনি বার্তা ফিরে এসেছে-নিজের নাক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যানসার কোষ কেটে ফেলতে হয়েছে তাকে।
অপারেশনের পর সামাজিকমাধ্যমে এক হৃদয়স্পর্শী বার্তা দিয়েছেন ক্লার্ক। অজি কিংবদন্তি লিখেছেন, ‘ত্বকের ক্যানসারের বাস্তবতা মেনে নিতেই হচ্ছে! আমার নাক থেকে আবারও ক্যানসারের অংশ কেটে ফেলা হলো। সবাইকে বলবো, নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করুন। প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় প্রতিকার। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। নিয়মিত চিকিৎসা ও ক্যানসার শনাক্ত করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মিই ত্বকের ক্যানসারের প্রধান কারণ। আলোর ঝলকে লুকিয়ে থাকে যে মরণফাঁদ, সেই সত্যটাই নতুন প্রজন্মকে সতর্ক করে দিতে চান ক্লার্ক।
তার মতে, ক্রিকেটাররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে খেলেন। মাথায় থাকা টুপিটুকু কখনোই যথেষ্ট সুরক্ষা দেয় না। তাই তিনি অনুরোধ করেছেন-সতর্ক থাকুন, সূর্যের আলোকে হালকাভাবে নেবেন না।
ক্লার্কের জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার কন্যা কেলসি লি ক্লার্ক। আদর করে যাকে তিনি ডাকেন খেলাধুলার রাজকন্যা নামে। ২০২০ সালে স্ত্রী কাইলির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মেয়েই তার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। কিন্তু প্রতিদিনের ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়-ক্যানসার কি তাকে কন্যার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে? বাংলায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে’। এমনই কোনো বাক্য হয়তো ক্লার্কের হৃদয়ে পেন্ডুলামের মতো দোলা দেয়। ক্লার্কের জীবনে এই দোলাচল স্পষ্ট-একদিকে সূর্যের আলো, অন্যদিকে সেই আলো থেকে জন্ম নেওয়া অন্ধকার রোগ। তবুও তিনি বারবার লড়াই করছেন, শুধু নিজের জন্য নয়, নিজের কন্যার জন্যও।