English

29 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

বন্যায় সিলেটের প্রায় সবকটি উপজেলা প্লাবিত, দূর্ভোগে লাখ লাখ মানুষ

- Advertisements -

জহিরুল ইসলাম মিশু ,সিলেট ব্যুরোঃ গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যাকবলিত হয়েছে সিলেট। এক মাসের মাথায় ফের বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট জেলা ও মহানগরীর অধিকাংশ জনপদ। এরমধ্যে চরম দূর্ভোগ ও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সিলেটের প্রায় সকল উপজেলার বাসিন্দারা।

এসব এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে তারা পৌঁছাতে পারছেন না। সিলেটে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছেন মানুষ। খাবার, বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার।

পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার পাঁচ উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদ। লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সারি নদের একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে বলে পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বানভাসি মানুষেরা বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। এ ছাড়া অনেক বন্যার্তরা খাবার ও পানির সংকটে সবচেয়ে বেশি পড়েছেন। ঘরে হাঁটু থেকে গলাসমান পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে ত্রাণও পাচ্ছেন না। এতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি যত বাড়ছে, সংকটও তত বাড়ছে।

বন্যায় সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোরতন, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও ঘাসিটুলা এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেক রাস্তায় পানি থই থই করছে। বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত সব উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ করবে বলে জানান তিনি।

বন্যায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার কারনে শ্রেণিকক্ষ তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটে প্রায় ৩শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সিলেট জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ওয়া্দুদ জানান, এ পর্যন্ত জেলার ৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের গোবিন্দগঞ্জ-দিঘলী এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওযায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সিলেটের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আজ শুক্রবারের মধ্যেই পুরো সিলেট শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নগরীর কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওই উপকেন্দ্র থেকে সারা সিলেটে বিদ্যুৎ সবরাহ করা হয়ে থাকে।
বিউবোর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন আর মাত্র ৪ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেলে কুমারগাঁও উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে পুরো সিলেট অন্ধকারে চলে যাবে।

এ অবস্থায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শুক্রবার দুপুর থেকে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।কুমারগাও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের চারপাশে বালির বস্তা দিয়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

বন্যাকবলিত হয়েছেন সিলেট মহানগরীর প্রায় ৫০টি এলাকার বাসিন্দা। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনদের জন্য নগরীতে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও উঠার অপেক্ষায় রয়েছেন আরও অনেকে।সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনদের দূর্ভোগ বেড়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর লাখো পানিবন্দী মানুষ।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সবকটি আশ্রয়কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়।অনেক লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ জায়গার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নগরীর বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনদের দ্রুত আরও আশ্রয়কেন্দ্র খোলার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন