English

24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

‘অলৌকিক’ আগুনে দিশেহারা গ্রামবাসী! আতঙ্ক থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা

- Advertisements -

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘অলৌকিক’ আগুন আতঙ্কে রয়েছেন শতাধিক গ্রামবাসী। সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে ঘরের আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। সেই সাথে রয়েছে মৃত্যুভয়। ভুক্তভোগীদের দাবি, গ্রামে পাহারা বসিয়ে এবং ওঝা-জ্যোতিষি এনেও আগুনের বিষয়ে জানা সম্ভব হয়নি। তাই আগুনের আতঙ্ক থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ভয়ে নিজের শিশু সন্তানকে পাশের গ্রামে বাবার বাড়িতে রেখে এসেছেন সুমি আক্তার। ঘরে যেকোনো সময় আগুন লেগে সব পুড়ে যাওয়ার আতঙ্কে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র বাইরে রেখে পাহারা দিচ্ছেন তিনি। দিনে ও রাতে আগুন আতঙ্কে ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়া ও ঘুমাতেও পারছেন না। শুধু সুমি আক্তারই নয়, আগুন আতঙ্কে রয়েছেন পুরো গ্রামের মানুষ।

ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিনের সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের মার্চের ২৮ তারিখ রাতে সর্বপ্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরের দিন আগুনে ৩টি পরিবারের ঘর-বাড়িসহ আসবাবপত্র পুড়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এরপর থেকে নুর আলম, মোতালেব, আলহাজ সিরাজ উদ্দীন, মকসেদ আলী, শেফালি আক্তার, মেরিনা আক্তার, মোহা. সাইফুল্লাহর পরিবারসহ আরো বেশ কয়েকটি পরিবারের বাড়িঘরে কথিত ‘অলৌকিক’ আগুন ধরে। ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, অলৌকিকভাবে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বার আগুন লাগছে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল দশবার ও ২৪ এপ্রিল ১১ বার আগুন লাগে ওই গ্রামে।

ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ জানান, মার্চের ২৮ তারিখ রাতে মৃত মকবুল হোসেনের বাড়ির খড়ের পোয়াল ঘরে সর্বপ্রথম আগুনের সূত্রপাত। এরপর থেকে গ্রামে বিভিন্ন লোকের বাড়িঘরে আগুন ধরা শুরু হয়। গ্রামের সব মানুষ আগুন আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না, ঘুমোতে পারেন না। সব কাজ ফেলে দিয়ে এখন শুধু আগুন পাহারা দিচ্ছেন সকলেই।

ভুক্তভোগী আলহাজ সিরাজ উদ্দীন জানান, আগুন নেভানোর জন্য এর মধ্যে প্রতিটি পরিবারে বড় পাতিল, কলসি, বালতি ও বিভিন্ন পাত্রে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সেই সাথে বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপনও করা হয়েছে। গ্রামে পাহারা রয়েছে সকলেই, কিন্তু এখন পর্যন্ত কে বা কারা এই আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে তা কেউ দেখেনি।

ভুক্তভোগী শেফালি আক্তার জানান, হঠাৎ করে একদিন তার ঘরের বিছানায়, টেবিলে ও জায়নামাজসহ কোরাআন শরীফেও আগুন ধরে যায়। সকলে মিলে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এর পর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সকলেই আতঙ্কে রয়েছে। যেহেতু কাউকে এই আগুন ধরিয়ে দিতে দেখেননি তিনি বা এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই সকলেই বলছে এই আগুন জিনে ধরিয়ে দিচ্ছে।

ভুক্তভোগী মেরিনা আক্তার জানান, জাদু-টোনা ও জিন-ভূতের আছরে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তাই এটিকে অলৌকিক ভেবে এর মধ্যে গ্রামে ওঝা (মাহাত) ও জ্যোতিষি এনে ঝাড়ফুঁক করা হয়েছে। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয় নাই। তাই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের মাধ্যমে আগুনের প্রকৃত কারণ উন্মোচনের দাবি করেছেন তিনিসহ সকল গ্রামবাসী।

জাদু-টোনা ও জিন-ভূতের আছরে এই আগুনের সূত্রপাত বলে বিশ্বাস করেন বালিয়াডাঙ্গী চাড়োল ইউনিন পরিষদের ইউপি সদস্য নরেন্দ্র সিংহ। তিনি নিজেও একাধিক জ্যোতিষি এনে ঝাড়ফুঁক করেছেন। কিন্তু এই আগুন কে দিচ্ছেন তা এখনো বলতে পারে নাই জ্যোতিষী।

একই কথা জানান চাড়োল ইউনিন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চ্যাটার্জী বাবু। তিনি বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে মিলাদ দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। এ ঘটনায় গ্রামের সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন। তাই আতঙ্ক নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স লিডার সফিউল্লা বসু মিয়া জানান, কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো অনুসন্ধান করা সম্ভব হয় নাই। পারিবারিক শত্রুতার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের খাদ্যসহ সকল সহযোগিতা করা হচ্ছে। ঘটনার কারণ জানতে গ্রামপুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া আগুন নেভানোর জন্য গ্রামে বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন ও পানি সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক গবেষকদের সহযোগিতায় ঘটনার রহস্য উন্মোচনের বিষয়ে চেষ্টা চলছে। কোনো দুষ্কৃতকারী এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন