English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

‘আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, ভালো মানুষ, ভালো ডাক্তার হবার তাওফিক দিন’

- Advertisements -

ডা. ইয়াবিদ আল শাফায়াত: ইন্টার্নিশিপ চলাকালীন হসপিটালে মাস ক্যাজুয়ালটি এর আগেও কয়েকবার ফেইস করেছি। কিন্তু আজকেরটা আগের তুলনায় অনেক প্রকট ছিলো।

গাইনী বিভাগে এডমিশন ডিউটিতে থাকা অবস্থায় রাত ১ঃ১৫ মিনিটের দিকে শুনলাম রংপুরের তারাগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকজন স্পট ডেড। বাকি পেশেন্টগুলো এর মধ্যে আমাদের মেডিকেলে আসা শুরু হয়েছে। ঘটনা শুনেই পাশের সার্জারী ওয়ার্ডে বাস্তবতা দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি চিন্তা যা করেছি অবস্থা তার চেয়ে ভয়াবহ! সারি সারি রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে পড়ে আছে। কারও সারা মুখভর্তি রক্তের ধারা, কারও মাথায় ফ্রাকচার, কারও হাত-পা ভাঙ্গা, কারও চোখের উপরের চামড়া চোখসহ ঝুলে রয়েছে, কারও মুখ-চোয়াল সব ভাঙ্গা, কারও মাথার হাড় মাঝ বরাবর ফেটে দু-ভাগ হয়ে রক্তের ঝর্ণা ছুটিয়েছে। মোটকথা একটা ম্যাসিভ এক্সিডেন্টে যে ধরণের ঘটনা ঘটে। সবাই অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। কতক রোগী অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে বাসসহ অনান্য গাড়ি রোগীগুলোকে জাস্ট মেডিকেলে দিয়েই চলে গেছে। কারও কোনো পরিচয় নেই। নেই টাকা, পয়সা, মোবাইল, মানিব্যাগ। চুরি হয়ে গেছে। ওয়ার্ডের অপ্রতুল মেডিসিন আর নামমাত্র ড্রেসিং ম্যাটারিয়ালস নিয়ে কয়েকজন ডাক্তার এতোগুলা রোগী নিয়ে কি করি!

তারপর, তড়িৎ সিদ্ধান্তে ডাক্তাররা নিজেরা টাকা তুলে, মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ডাক্তারদের সংগঠনগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এক এক করে ম্যানেজমেন্ট শুরু।

এরপর শুনলাম নিউরোসার্জারীতে আরও বাজে অবস্থা। সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল রোগীগুলো সেখানে কাতরাচ্ছে। ডিউটি ডক্টর মাত্র ১ জন। তৎক্ষনাৎ সেখানে গিয়ে ম্যানেজমেন্ট শুরু। মেডিকেলের জুনিয়ররা তহবিল সংগ্রহ করে অনেক ঔষধ কিনে আনলো। নার্স অপ্রতুল হওয়ায় ডাক্তাররা নিজেরাই ক্যানুলা করে ফ্লুইড, আইভি, আই এম সব মেডিসিন দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে চিকিৎসা শুরু করলাম। এরপর জুনিয়ররা তৎক্ষনাৎ ব্লাড ম্যানেজ করা আরম্ভ করলো। এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। এরপর শুরু হলো ফলো আপ। এই ওয়ার্ড ঐ ওয়ার্ড দৌড়াদৌড়ি, কাউন্সেলিং, নেগেটিভ কাউন্সেলিং, নতুন মেডিসিন অ্যাড। সবশেষে দেখা গেলো প্রচুর বৃষ্টি আর বর্জ্রপাতের মধ্যে মধ্যরাতে ওয়ার্ড ডাক্তার ও মেডিকেল স্টুডেন্ট দিয়ে ভর্তি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও নিউরোসার্জারী, সার্জারী আর অর্থোসার্জারী মিলে কয়েকজন পেশেন্ট মারা গেলো। শুরু হলো আহাজারি, চিৎকার। জীবিত যারা রইলো, তারাও চেয়ে রইলো অনিবার্য অদৃষ্টের পানে।

পুনশ্চঃ যখন কোথাও ম্যাসিভ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, দেশের সবখানেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্পেশালি ইন্টার্ন ও মিড লেভেল ডাক্তাররা চিকিৎসাব্যাবস্থার অপ্রতুলতার নির্মম স্বাক্ষী হন। নিজেদের অল্প বা নাই উপার্জন থেকে শরীক হয়ে রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করেন। একই সময় বেওয়ারিশ চেতনাহীন রোগীগুলো ছিনতাইকারী, পকেটমারদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হন। এমনকি হাসপাতালে এসেও আজ এই ঘটনা ঘটেছে। রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে, প্রবল বৃষ্টি আর বর্জ্রপাতের মধ্যে যেসকল ডাক্তার, মেডিকেল স্টুডেন্ট, নার্সরা আজ এই মাস ক্যাজুয়ালটি ম্যানেজ করলেন আল্লাহ সবাইকে ইহকাল ও পরকালে বারাকাহ দিন।

ডা. ইয়াবিদ আল শাফায়াত,
ইন্টার্ন চিকিৎসক,
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন