English

36 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

ইউএনও’র উদ্যোগে দেশের নাম উজ্জ্বল করলো বিরামপুরের মোস্তাকিম

- Advertisements -

যাযাবর পলাশ: প্রবাদে আছে ‘গোবরেও পদ্মফুল ফোটে’। আর সঠিক মানুষের সাহচার্য ও অনুপ্রেরণা পেলে পাড়া-গাঁয়ের ঐ অখ্যাত শিশুটিও একদিন বিখ্যাত হতে পারে। ঠিক সেই গল্পেরই উপাখ্যান রচনা করে ফেলেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে মোস্তাকিম হোসেন। সে সাউথ এশিয়া রিজিওনাল জুনিয়র ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২২(অনুর্ধ্ব-১৫) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গৌহাটি, আসাম, ইন্ডিয়াতে। ১০ টি দেশের প্রতিযোগীরা এ খেলায় অংশ নিয়েছিল। মোস্তাকিমরা শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার এই গৌরব অর্জন করেছে।

ব্যাডমিন্টন তার প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু সমস্যা হলো সাংসারিক টানাপোড়েন। গরীব ঘরে জন্ম হলেও ব্যাডমিন্টন খেলায় দারুণ পারদর্শী সে। স্বপ্ন ছিলো একজন নামকরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবে সে। কিন্তু নড়বড়ে সাংসারিক অবস্থা তার সেই স্বপ্নের পথে কাঁটার দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়। মোস্তাকিমের বাবা পেশায় রিকশাচালক, মা সংসারের কাজ সামলানোর পাশাপাশি বাইরে টুকটাক কাজ করে সামান্য টাকা আয় করে। সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকলেও সুযোগ পেলেই ব্যাডমিন্টন খেলতে ছুটে যেতো মোস্তাকিম।

এভাবেই একদিন খেলতে গিয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকার এর নজরে পরে সে। আর ছেলেটি প্রতিভার আগুন আঁচ করতে পারেন অত্যন্ত নিরহংকার ও মানবিক ইউএনও খ্যাত উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকার। তিনি মোস্তাকিমকে এগিয়ে যাবার রাস্তা দেখান। সেই সাথে তিনি আর্থিক সহযোগিতা সহ মাথার উপর অনুপ্রেরণার ছায়া হয়ে দাঁড়ান। আর এই অনুপ্রেরণার শক্তিতেই স্বপ্ন জয়ের যুদ্ধে অগ্রগামী পথিক এখন মোস্তাকিম।

মোস্তাকিমের এই এগিয়ে যাওয়া এবং অনন্য প্রাপ্তিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত ইউএনও পরিমল কুমার সরকার। মোস্তাকিম শুধু দেশের নামই নয়, বিরামপুরের নামও উজ্জ্বল করেছে। তাই এই খুশির খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ইউএনও পরিমল কুমার সরকার মোস্তাকিমকে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে তার ফেসবুক একাউন্টে একটি লম্বা পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেই সাথে মোস্তাকিম যেন আরও অনেকদূর এগিয়ে যায় সেই প্রত্যাশাও ব্যাক্ত করেছেন।

নিচে ইউএনও পরিমল কুমার সরকার এর ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো –

সামান্য উদ্যোগ কিন্তু বিশাল প্রাপ্তি। ছেলেটা একদিন বিরামপুর উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে খেলতে এসেছিল। সেদিনই আমার সাথে পরিচয়। কয়েকমাস পর স্কুল পর্যায়ের খেলায় সে সারাদেশে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এরপর বেশ কিছুদিন খবর নেয়া হয় নি। একদিন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম আমাকে জানালো যে মোস্তাকিমকে সে রিকশা চালাতে দেখেছে। আমি তো শুনে অবাক, কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তখন মাসুম বললো মোস্তাকিমের পরিবারের দুর্দশার কথা। ওর বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ ছিল, সংসার চালানোর তাগিদেই তাকে এই বাচ্চা বয়সে রিকশার হ্যান্ডেল ধরতে হয়েছে। ঢাকায় সে একটা একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয়, সেখানে যাওয়ার টাকা দেয়ার সামর্থ্যও তার পরিবারের নেই। একাডেমি থেকে জানিয়েছে শুধু থাকা-খাওয়ার খরচ দিলেই চলবে। আমি জানতে চাইলাম, তাতে মাসে কত টাকা লাগবে? সে বললো মাসে ৫ হাজার টাকা। আমি তাকে অফিসে ডেকে এনে বললাম যে তোমাকে আমি ২ মাস চলার জন্য দশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তুমি আজই ঢাকা যাও। এর ২ দিন পর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে সমাজকল্যাণ তহবিল থেকে দশ হাজার টাকার একটি চেক তার বাবার হাতে দিলাম। অফিসার্স ক্লাবের অনেক কর্মকর্তা ও বিরামপুরের অনেক সহৃদয়বান ব্যক্তিও তাকে সহযোগিতা করলেন। এ ঘটনার ৩ মাস না পেরোতেই ছেলেটি এত বড় চমক উপহার দিবে আমি কল্পনাই করি নি। সে সাউথ এশিয়া রিজিওনাল জুনিয়র ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২২(অনুর্ধ্ব-১৫) গৌহাটি,আসাম,ইন্ডিয়াতে ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১০ টি দেশের প্রতিযোগীরা এ খেলায় অংশ নিয়েছিল। মোস্তাকিমরা শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে গতকাল চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে।

আমার নিজের সন্তানের সাফল্যে যতটা খুশী হই, ওর চ্যাম্পিয়ন হবার খবর শুনে আমি ততটাই খুশী হয়েছি। ইউএনও হিসেবে অনেক মানুষের মাঝেই সরকারি সহায়তা দিয়েছি, কিন্তু ঐ ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান আমার চাকুরী জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবেই মনে করছি। মোস্তাকিমের মত ছেলেরা সামান্য সুযোগ পেলেই নিজের দেশের লাল-সবুজ পতাকা বিদেশের মাটিতে সাফল্যের সাথে উড়াতে পারে। আমরা তো কত অকাজেই টাকা খরচ করি, কিন্তু মোস্তাকিমের মত সোনার ছেলেদের পিছনে টাকা খরচ করতে অনেকেই পিছপা হই। অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাসুম, শানু ও মাহমুদ মানিক সাহেবকে।

মোস্তাকিমের জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভকামনা রইল। এভাবেই এগিয়ে যাও এবং ভবিষ্যতে তোমার মত ছেলেদের ভরসাস্থলে পরিণত হও। বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচাও, বিরামপুরবাসী তথাপি দেশবাসীকে গৌরবান্বিত করো।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন