English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৩৭ ডেঙ্গু রোগী, বাড়ছে ম্যালেরিয়াও

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

কক্সবাজারে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। সেই সঙ্গে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও কক্সবাজারে ডেঙ্গু নিয়ে তেমন কারো কোনো ধারণাই ছিল না। ডেঙ্গু রোগীও ছিল না তেমন।

কিন্তু এখন ঘরে ঘরেই ডেঙ্গু রোগী। কেবল কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে মারাও গেছেন ৪ জন।
ঘরে ঘরে জ্বরাক্রান্ত রোগী রয়েছে। তবে পরীক্ষা-নীরিক্ষার অভাবে কে ডেঙ্গু, কে ম্যালেরিয়া আর কেইবা কভিডে আক্রান্ত তার সঠিক চিত্র স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আসছে না। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুমিনুর রহমান গতকাল বিকালে বলেন-‘এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি অসচেতন। জ্বরাক্রান্ত হয়েও বাসা-বাড়িতেই থাকেন বেশি। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অনীহা প্রকাশ করেন। এ কারণে রোগীর সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ’
তিনি বলেন, রোগে আক্রান্ত হলেও মানুষ হাসপাতালমুখি নয়। শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেই কেবল হাসপাতালের দিকে পা বাড়ান। ডা. মুমিনুর রহমান জানান, তার মতে কক্সবাজার এলাকায় উদ্বেগজনকভাবে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। গতকাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি থাকা ৩৭ জন রোগীর মধ্যে ২০ জনই হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। অপর ১৭ জন হচ্ছে রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান-‘ এর আগে কক্সবাজারে ডেঙ্গুর এমন বিস্তার আর দেখা যায়নি। মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও যথেষ্ট সচেতন নয়। ’ তিনি জানান, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৮৮ জন ডেঙ্গু রোগি কক্সবাজারের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসবের মধ্যে ১০০ জন হচ্ছেন স্থানীয় ও অপর ৮৮ জন হচ্ছেন রোহিঙ্গা। ডেঙ্গু নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যুও হয়েছে।

কক্সবাজার সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংক্রামক ব্যধি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. শাহজাহান নাজির জানান, জেলা সদর হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছে। রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে ডেঙ্গু বেশি হলেও সেখানে প্রচুর সংখ্যক হাসপাতাল রয়েছে। তবে সেখানে কোনো রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাদেরও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ডা. শাহজাহান নাজিরের মতে কক্সবাজারে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে রোহিঙ্গা শিবির থেকেই। রোহিঙ্গা শিবিরেই যেহেতু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি সেজন্য রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিওগুলোর ৫০ জন চিকিৎসকদের নিয়ে গতকাল ডেঙ্গু নিয়ে এক কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ কর্মশালার আয়োজন করে। তিনি জানান, ইদানিং কক্সবাজারে ডেঙ্গুর সঙ্গে উদ্বেগজনকভাবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

ডা. শাহজাহান নাজির জানান, গত ৫/৬ বছর ধরে কক্সবাজার এলাকা ছিল এক প্রকার ম্যালেরিয়ামুক্ত। কিন্তু গত জুন-জুলাই দেড় মাসেই ৪০ জন ম্যালেরিয়া রোগী কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন মারাও গেছে। পার্শ্ববর্তী জেলা বান্দরবানের আলীকদম-লামাসহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় কাজ করতে গিয়েই বেশির ভাগ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন বলে জানান তিনি। ইদানিং মশার উপদ্রবও বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও ম্যালেয়িার জীবাণুবাহী মশার কামড় থেকে রেহাই পেতে তিনি জনগণকে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মতে, এতকাল ডেঙ্গু নিয়ে কক্সবাজারের মানুষের তেমন ধারণাই ছিল না। রোহিঙ্গা শিবিরেই প্রথম ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিও কর্মীদের মাধ্যমেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বলে তিনি মনে করেন। রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত ওই চিকিৎসকের মতে, রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকার ডেঙ্গু আক্রান্ত এনজিও কর্মীদের মাধ্যমেই জীবণুবাহী মশা শিবিরগুলোতে ছড়িয়ে বংশবিস্তার করেছে। সেখান থেকেই ঘনবসতির শিবিরে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু।

এদিকে রোহিঙ্গা শিবিরের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. তোহা ভুঁইয়া জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি। গত জানুয়ারি থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, এ সময় পর্যন্ত শিবিরগুলোতে ৩ হাজার ৯২ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন মারাও গেছেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন