English

38 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

দেবে যাচ্ছে ভারতের জোশীমঠ শহর, সরানো হচ্ছে বাসিন্দাদের

- Advertisements -
Advertisements

ক্রমশ মাটির নিচে দেবে যাচ্ছে হিমালয় পাদদেশের ভারতীয় শহর জোশীমঠ। উত্তরাখণ্ডের এলাকাটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। একই দশা রাস্তাগুলোতেও। বিপজ্জনক এলাকাগুলো খেবে দ্রুত বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হেলিকপ্টারও।

Advertisements

গত শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী বলছেন, শহরবাসীর জন্য বড় বড় আশ্রয় শিবির খোলা হবে। প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে দুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

জোশীমঠ শহর হয়েই হিন্দুদের পবিত্র চারধাম যাত্রা করতে হয়। প্রতিবছর লাখ লাখ তীর্থযাত্রী এ যাত্রায় অংশ নেন। তাদের সুবিধার জন্য যে রাস্তা চওড়া করার কাজ চলছিল, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জোশীমঠ এলাকায় সবধরনের নির্মাণকাজও বন্ধ থাকবে। যেসব হোটেলে ফাটল দেখা গেছে, সেগুলোতে পর্যটকদের থাকা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

সবার মনে আতঙ্ক
শুক্রবার সারা রাত প্রবল ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। যারা এখনো বাড়ি ছেড়ে যাননি, তাদেরও প্রতি মুহূর্ত কাটছে আতঙ্কে। এমনকি প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও বৃষ্টি পড়লেই তারা বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছেন। কারণ বৃষ্টিতেই ভূমিধসের আশঙ্কা বেশি থাকে।

জোশীমঠের সুনিল গ্রামের বাসিন্দা সুনাইনা সাকলানির বাড়িতে গিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিকরা। তার বাড়ির দেওয়ালে, মেঝেতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।

সুনাইনা বলেন, ‘এই ঘরে আমি ও আমার বোন থাকতাম। অক্টোবর মাসে যখন খুব বৃষ্টি হলো, তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ফাটল দেখা দেয়। আর এখন সেগুলো বিরাট হয়ে গেছে।’

রভিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সুমেধা ভাট বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আমরা বাইরে বেরিয়ে যাই। ঘরের ভেতরে থাকতে খুব ভয় করে, কে জানে কখন ভেঙ্গে পড়বে!’

রভিগ্রাম এলাকা কী হারে দেবে যাচ্ছে, তা পরিমাপ করার জন্য পুরনো নথিপত্রের সঙ্গে স্যাটেলাইটের ছবি ব্যবহার করছেন ভূতাত্ত্বিক স্বপ্নমিতা ভৈদেশ্বরণ। তার মতে, গত দু’বছরের পরিমাপ নিয়ে দেখতে পেয়েছেন, রভিগ্রাম প্রতিবছর ৮৫ মিলিমিটার করে বসে যাচ্ছে।

বাসিন্দারা বলছেন, তাদের একেকজন একেক ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এই এলাকা থেকে চলে গিয়ে অন্য কোথাও ঘর বানাতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাদের অনেকেরই নতুন বাড়ি বানানোর মতো অর্থ নেই।

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান রঞ্জিত কুমার সিনহা বলেন, ‘যেসব পরিবারের বাড়িতে বড়সড় ফাটল হয়েছে বা যাদের বাড়ি একেবারেই থাকার অযোগ্য হয়ে গেছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করছি আমরা।’

‘চাপ নিতে পারছে না হিমালয়’
গত অক্টোবর মাসে প্রবল বর্ষণের সময় থেকেই জোশীমঠে ঘরবাড়ি ও রাস্তায় ফাটল দেখা দিতে থাকে। সবশেষ বড় ফাটলগুলো নজরে আসে গত বৃহস্পতিবার রাতে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৬১টি বাড়িতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হিমালয়ের নাজুক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও অন্যান্য নির্মাণকাজের চাপ পাহাড় আর নিতে পারছে না।

স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট অতুল সাতি বলেন, ‘শুধু জোশীমঠ নয়, পুরো উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতি একই। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলো খুবই নাজুক। তার ওপর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ্য করতে হচ্ছে এ অঞ্চলকে।’

কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞ দল
দারুণ সুন্দর এই শৈল শহর কেন ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী জিওলজিকাল সার্ভে, ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট এবং আইআইটি রূরকির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারও পৃথক একটি দল পাঠাচ্ছে জোশীমঠে। সেখানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় পানি কমিশন, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ক্লিন গঙ্গা মিশনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তারা গিয়ে ওই এলাকার মাটির অবস্থা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী করণীয় সে বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন দিল্লিকে।

জোশীমঠে ফাটল ও ভূমিধসে এলাকা দেবে যাওয়ার কথা প্রথম সামনে আসে ১৯৭৬ সালে। একটি সরকারি কমিটির নথিতে উল্লেখ রয়েছে, বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেসময় জোশীমঠ এলাকা দেবে যাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন তারা।

এখন বিপদের মুখে পুনর্বাসনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়ি এলাকায় একের পর এক অবঠামোগত উন্নয়নের নামে পাথর কেটে রাস্তা তৈরি বা চওড়া করা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য টানেল তৈরির কারণেই পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন