রভিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সুমেধা ভাট বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আমরা বাইরে বেরিয়ে যাই। ঘরের ভেতরে থাকতে খুব ভয় করে, কে জানে কখন ভেঙ্গে পড়বে!’
রভিগ্রাম এলাকা কী হারে দেবে যাচ্ছে, তা পরিমাপ করার জন্য পুরনো নথিপত্রের সঙ্গে স্যাটেলাইটের ছবি ব্যবহার করছেন ভূতাত্ত্বিক স্বপ্নমিতা ভৈদেশ্বরণ। তার মতে, গত দু’বছরের পরিমাপ নিয়ে দেখতে পেয়েছেন, রভিগ্রাম প্রতিবছর ৮৫ মিলিমিটার করে বসে যাচ্ছে।
বাসিন্দারা বলছেন, তাদের একেকজন একেক ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এই এলাকা থেকে চলে গিয়ে অন্য কোথাও ঘর বানাতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাদের অনেকেরই নতুন বাড়ি বানানোর মতো অর্থ নেই।
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান রঞ্জিত কুমার সিনহা বলেন, ‘যেসব পরিবারের বাড়িতে বড়সড় ফাটল হয়েছে বা যাদের বাড়ি একেবারেই থাকার অযোগ্য হয়ে গেছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করছি আমরা।’
‘চাপ নিতে পারছে না হিমালয়’
গত অক্টোবর মাসে প্রবল বর্ষণের সময় থেকেই জোশীমঠে ঘরবাড়ি ও রাস্তায় ফাটল দেখা দিতে থাকে। সবশেষ বড় ফাটলগুলো নজরে আসে গত বৃহস্পতিবার রাতে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৬১টি বাড়িতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হিমালয়ের নাজুক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও অন্যান্য নির্মাণকাজের চাপ পাহাড় আর নিতে পারছে না।
স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট অতুল সাতি বলেন, ‘শুধু জোশীমঠ নয়, পুরো উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতি একই। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলো খুবই নাজুক। তার ওপর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ্য করতে হচ্ছে এ অঞ্চলকে।’
কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞ দল
দারুণ সুন্দর এই শৈল শহর কেন ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী জিওলজিকাল সার্ভে, ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট এবং আইআইটি রূরকির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারও পৃথক একটি দল পাঠাচ্ছে জোশীমঠে। সেখানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় পানি কমিশন, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ক্লিন গঙ্গা মিশনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তারা গিয়ে ওই এলাকার মাটির অবস্থা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী করণীয় সে বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন দিল্লিকে।
জোশীমঠে ফাটল ও ভূমিধসে এলাকা দেবে যাওয়ার কথা প্রথম সামনে আসে ১৯৭৬ সালে। একটি সরকারি কমিটির নথিতে উল্লেখ রয়েছে, বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেসময় জোশীমঠ এলাকা দেবে যাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন তারা।
এখন বিপদের মুখে পুনর্বাসনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়ি এলাকায় একের পর এক অবঠামোগত উন্নয়নের নামে পাথর কেটে রাস্তা তৈরি বা চওড়া করা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য টানেল তৈরির কারণেই পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা।