English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে বিশ্বমঞ্চে রেনার্ড

- Advertisements -

খেলোয়াড়ি জীবনে তেমন কিছুই করতে পারেননি। শীর্ষ পর্যায়ের কোনো ক্লাবে খেলার সৌভাগ্যও হয়নি। জাতীয় দল তো দূরের বাতিঘর। কিন্তু ফুটবলে তার দ্বিতীয় অধ্যায়টা ছাপিয়ে গেছে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের দুঃখকে। সবুজ ময়দানে না পারলেও ডাগ আউটে বেশ সফল হার্ভে রেনার্ড। তার অধীনেই এবারের নারী বিশ^কাপে খেলছে ফ্রান্স।

১৯৯৯ সালে কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর আগে রেনার্ডের গল্পটা ছিল সংগ্রামের। অভাব-অনটনে কেটেছে তার দিন। অভাবের তাড়নায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন ফরাসি কোচ। ৫৪ বছর বয়সী এই কোচ এখন সংগ্রামী জীবনের বড় একটা উদাহরণ। নিজের ওপর আস্থা ও নিরলস পরিশ্রম তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে। তবু অহমিকাবোধ নেই তার। রেনার্ড যেন বিনয়ের অবতার।

গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া ফিফা ফুটবল বিশ^কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু লিওনেল মেসিদের স্বপ্নযাত্রা শুরুতেই কঠিন করে তুলেছিল সৌদি আরব। পিছিয়ে থেকেও লাতিন আমেরিকান জায়ান্টদের ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের দলটি, যা বিশ^কাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটনগুলোর একটি। সৌদি আরবের এই অভাবনীয় সাফল্যের নেপথ্য নায়ক ছিলেন রেনার্ড। তার দুর্দান্ত রণকৌশলেই তো ধরাশায়ী হয়েছিলেন মেসি অ্যান্ড কোং।

রেনার্ডকে রেখে দিতে চেয়েছিল সৌদি আরব। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এই কোচ। দেশটিতে চার বছরের কোচিং শেষে তিনি ফিরে এসেছেন ঘরে; দায়িত্ব নিয়েছেন ফ্রান্স নারী দলের। তার অধীনে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছেন ফরাসিরা। ফ্রান্স শিরোপা জিততে পারবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর তোলা থাকল ভবিষ্যতের হাতে। কার্যত গতকাল বিরল এক ইতিহাস গড়ে ফেললেন রেনার্ড।

প্রথম ও একমাত্র কোচ হিসেবে এক বছরের মধ্যে (মূলত ৭ মাস) দুটি আলাদা বিশ^কাপের ডাগ আউটে দাঁড়িয়েছেন রেনার্ড। জ্যামাইকার বিপক্ষে অবশ্য জিততে পারেনি তার দল। ১০ জনের প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছেন ফরাসি মেয়েরা। এই হতাশা ভুলে নিশ্চয়ই পরবর্তী ম্যাচগুলো আরও ভালো করতে চাইবেন তারা।

দুই যুগের কোচিং ক্যারিয়ারে রেনার্ডের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আফ্রিকান ফুটবলে। ফরাসি কোচ কাজ করেছেন জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা, আইভরি কোস্ট, মরক্কোর মতো

দলের হয়ে। এর মধ্যে জাম্বিয়া ও আইভরি কোস্টের হয়ে জিতেছেন আফ্রিকান নেশনস কাপের শিরোপা। তার অধীনেই ২০১৮ রাশিয়া বিশ^কাপে অংশ নিয়েছিল মরক্কো।

শীর্ষপর্যায়ের কোচিংয়ে আসতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে রেনার্ডকে। ইংল্যান্ডের চতুর্থ সারির ক্লাব ক্যামব্রিজ ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঘুরতে থাকে তার ভাগ্যের চাকা। এর আগে লম্বা সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। জীবিকার তাগিদে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বুট জোড়া তুলে রাখতে হয়েছে ফরাসি কোচকে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের নিচু স্তরের অপেশাদার ক্লাবে খেলতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ঠিকঠাক মিলত না পারিশ্রমিক। পরে স্বপ্নপূরণের তাড়নায় ক্লিনারের কাজ নেন তিনি। এসসি ড্রাগুইগনানের জার্সিতে খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ ম্যাচটি খেলেন রেনার্ড। এই ক্লাবের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

২০১৯ সালে বিবিসি স্পোর্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংগ্রামের সেই দিনগুলোর বর্ণনা রেনার্ড করেছিলেন এভাবে- ‘আমি প্রতিদিন সকাল আড়াইটায় (ফ্রান্সের স্থানীয় সময়) ঘুম থেকে উঠতাম এবং বিকাল পর্যন্ত কাজ করতাম। ৫টার দিকে আমি ড্রাগুইগন্যানের হয়ে অনুশীলনে যোগ দিতাম। আমরা অনুশীলন করতাম এবং ৯টা বাজে খেয়ে ১১টায় বিছানায় যেতাম। টানা ৮ বছর এটাই ছিল আমার নিত্যদিনের সূচি।’

রেনার্ড যোগ করেন, ‘আমি যা করেছি এটার জন্য লজ্জিত নই, বরং গর্বিত। একজন ফুটবলার হিসেবে আমার জীবনটা ব্যতিক্রমী ছিল। আমি পরে একটা স্বাধীন জীবন পেয়েছি এবং অবশ্যই আমি ওই সময়ের কথা ভুলে যেতে পারি না। আপনাকে অবশ্যই সত্যিটা মানতে হবে; নিজের ওপর বিশ^াস রাখতে হবে। তবেই আপনি সফল হবেন।’

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন