English

29 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলা চলচ্চিত্রের রূপকথার যাদুকর, গুণী নির্মাতা ইবনে মিজান

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: বাংলা চলচ্চিত্রের রূপকথার যাদুকর ছিলেন তিনি। একসময়ে এদেশের ফোক-ফ্যান্টাসী ও অ্যাকশান ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্মাতািও ছিলেন তিনি । বলছি বাণিজ্যসফল বাংলা চলচ্চিত্রের গুণী নির্মাতা ইবনে মিজান এর কথা। আমাদের চলচ্চিত্রের কির্তিমান এই মানুষটির আজ পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার করোনাশহরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। প্রয়াত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

পোশাকি চলচ্চিত্রের সুনিপূণ নির্মাতা ইবনে মিজান ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ৮ আশ্বিন, সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহন করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেছেন। তাঁর বাবা মিজানুর রহমান ছিলেন জাদরেল পুলিশ অফিসার । বড় ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুখলেছুর রহমান, বড় বোন অধ্যাপিকা মুসলেমা খাতুন, ছোট বোন বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপিকা মকবুলা মঞ্জুর, আরেক ছোট ভাই চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজ মেহের। মোট সাত ভাই-বোন ছিলেন তাঁরা।

ইবনে মিজান পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘অওর গম নেহি’ মুক্তি পায়নি। তারঁ মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি ‘একালের রূপকথা’ মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে। ইবনে মিজান পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্রেরর মধ্যে- আবার বনবাসে রূপবান, কমল রানীর দিঘী, জংলী মেয়ে, রাখাল বন্ধু, জরিনা সুন্দরী, পাতালপুরীর রাজকন্যা, আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী, শহীদ তিতুমীর, নাগ নাগিনীর প্রেম, কত যে মিনতি, ডাকু মনসুর, নিশান, জিঘাংসা, দুই রাজকুমার, শাহজাদা, তাজ ও তলোয়ার, এক মুঠো ভাত, নিশান, পাতাল বিজয়, লাইলী মজনু, পুনর্মিলন, বাগদাদের চোর, রাজকুমারী, রাজনর্তকী, বসন্তমালতী, বাহাদুর, বাহাদুর নওজোয়ান, বাহাদুর মেয়ে, জংলী রানী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, রাজবধূ, সাগর কন্যা, রঙ্গীন রাখাল বন্ধু, আলাল দুলাল, সাপুরে মেয়ে, নাগজ্যোতি, জলপরি, অন্যতম।

আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প বাণিজ্যিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছিল যাদের প্রচেষ্টায়-দক্ষতায় তাদের অন্যতম একজন ছিলেন পরিচালক ইবনে মিজান। একটা সময় ছিল, ইবনে মিজানের ছবি মানেই হিট-সুপারহিট, তাঁর নামেই দর্শক ছুটে যেতেন সিনেমা হলে। ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির অনন্য কারিগর ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশে তাঁর ছবিতেই প্রথম গ্রাফিকস্ ব্যবহার করা হয়। সেসময়ে তিনিই দেখিয়েছিলেন আকাশ দিয়ে মানুষের উড়ে যাওয়া, আবার পানির নিচে মানুষের বসবাস’সহ এরকম আরো অনেক চমকদার সব দৃশ্য, যা দেখে তখনকার সিনেমা দর্শকরা বিপুল আনন্দে বিনোদীত হয়েছেন। সামাজিক অ্যাকশনধর্মী ছবিতেও তার সাফল্য রয়েছে ব্যাপক।

যখন যে ছবিই করেছেন, ব্যবসায়িক সাফল্যের বরপুত্র হয়ে এসেছেন ইবনে মিজান। দর্শকপ্রিয় পরিচালক হিসেবে তাঁর অবস্থান ছিল অনন্য উচ্চতায়।

নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো চলচ্চিত্রের এই বিখ্যাত মানুষটিকে চেনেন না, জানেন না। অথচ ইবনে মিজান বাংলাদেশের বিশুদ্ধ বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্রের এক অবিসংবাদিত নির্মাতা। তিনি বিপুল বিক্রমে বিচরণ করেছেন একসময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতে। লোককাহিনী আর রূপকথাকে সিনেমার রূপালী পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন সুনিপূণ দক্ষতায়। অনন্য গুণী এই পরিচালক তাঁর মত করে এক নিজস্ব ভুবন সৃষ্টি করেছিলেন চলচ্চিত্রজগতে, যা ছিল অন্যদের চাইতে একেবারেই আলাদা। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র ছিল বিশুদ্ধ বিনোদনে ভরা। অধিকাংশ সিনেমাদর্শকদের কাছে ছিল তাঁর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।

জীবদ্দশায় ইবনে মিজানকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা/ সম্মানটুকু দিতে আমরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। তিনি ১৯৯০ সালের দিকে চলচ্চিত্র ও দেশ ছেড়ে স্বপরিবারে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। বেছে নিয়ে ছিলেন নিভৃত জীবন। আর নিভৃতেই বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে।

কৃতজ্ঞতা জানাই অভিবাদন জানাই ইবনে মিজান আপনাকে, আমাদের চলচ্চিত্রিশল্পে বাণিজ্যসফল সব চলচ্চিত্র নির্মান করে, গুরুত্বপূর্ণ অনন্য অবদান রাখার জন্য। বিনোদনধর্মী সিনেমার সাধারণ বাঙ্গালী দর্শকদের হৃদয়ে আপনি ও আপনার সৃষ্টিকর্ম- চির অমলিন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন