তরুণসমাজের জন্য ভয়াবহ অভিশাপ ইয়াবা আসক্তি। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে এই মারাত্মক নেশা। স্কুল-কলেজের কিশোর, এমনকি কিশোরীরাও ক্রমে এই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। বাড়ছে আসক্ত কিশোর ও তরুণের সংখ্যা। এর প্রধান কারণ ইয়াবার সহজলভ্যতা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, মাদকবিরোধী কঠোর অভিযানের পরও ইয়াবা কারবারের নেপথ্যের গডফাদাররা সক্রিয় রয়েছেন। অভিযানের শুরুতে কমলেও করোনা মহামারিতে ইয়াবা কারবার আবার বেড়েছে।
গত ছয় মাসে অভিযান কমে যাওয়া, চিহ্নিত কারবারিদের জামিনে মুক্তি পাওয়া এবং পলাতকরা এলাকায় ফেরায় কারবার ফের চাঙ্গা হয়েছে। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, দুই দফায় ১২৩ কারবারি আত্মসমর্পণ করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তদের ৪০ জন আত্মসমর্পণ করেননি। গত এক বছরে ২৭ আত্মসমর্পণকারীসহ অন্তত ৪০ কারবারি জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। শীর্ষ কারবারিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলার মাধ্যমে তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আছে।
দুই বছরে মাত্র ১২ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ। তদন্ত করে শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়নি এখনো।
ইয়াবা অত্যন্ত সক্রিয় একটি মাদক এবং এর নেশা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, যেকোনো মাদকই ক্ষতিকর, তবে ইয়াবার ক্ষতি সবচেয়ে মারাত্মক। এটি মানুষকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। নিয়মিত সেবনে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান কমে যায়। নেশার অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা করতে পারে না এমন কাজ নেই। সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই এমন ব্যয়বহুল মাদকের ব্যবহারকারী। আবার ছাত্র-যুব রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক অবৈধ উপার্জনকারীও ইয়াবায় আসক্ত।
অভিযোগ রয়েছে, শীর্ষস্থানীয় অনেক রাজনীতিবিদ এদের ব্যবহার করে এবং অবৈধ উপার্জনের পথ করে দেয়। অনেক মাদকসেবী অর্থ জোগাড়ের জন্য চুরি-ডাকাতিতেও জড়িয়ে পড়ে। তখন ইয়াবার সঙ্গে অস্ত্রেরও একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইয়াবাসেবীরা একসময় খুনখারাবিসহ নানা ধরনের অপরাধ কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে।
সমাজ দ্রুত কলুষিত হতে থাকে, অপরাধ বাড়ে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়। দেশের উন্নয়ন বা উৎপাদনশীলতায় যে তরুণসমাজের প্রধান ভূমিকা রাখার কথা, তারা ক্রমেই বহনের অযোগ্য বোঝায় পরিণত হয়।
ইয়াবার এই বিস্তার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যাওয়ার আগেই সর্বাত্মকভাবে তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে।