সর্বনাশা মাদকের ভয়াবহ থাবা এখন গ্রাম-গ্রামান্তরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এতটাই সহজলভ্য হয়ে পড়েছে যে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের মাদক। তরুণসমাজের পাশাপাশি ক্রমেই কিশোরদেরও একটি বড় অংশ আজ মাদকাসক্ত। প্রচলিত মাদক কারবার কমেনি।
অন্যদিকে বাড়ছে অপ্রচলিত মাদকের কারবার। মাদকাসক্তরা যেমন নিজেদের ধ্বংস করছে, তেমনি পরিবারকেও ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। অন্যদিকে মাদকের অবশ্যম্ভাবী অনুসর্গ হিসেবে তারা নানা ধরনের অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে সামাজিক স্থিতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শৈথিল্য রয়েছে বলেও অভিযোগ শোনা যায়।
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ধামরাই থানার পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চলতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত মাস অভিযান চালিয়ে মোট ৩০ লিটার মদ, ৪২ বোতল ফেনসিডিল, ১১ কেজি ৩৭৫ গ্রাম গাঁজা, ৬৮ গ্রাম ৪৮৫ পুরিয়া হেরোইন ও পাঁচ হাজার ৫৪১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১২ জনকে। এর পরও ধামরাইয়ের জনপ্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রতিটি ইউনিয়নেই মাদকের কারবার বাড়ছে।
শুধু ধামরাই বা মফস্বল এলাকা নয়, সারা দেশেই মাদকের কারবার বাড়ছে। এর মধ্যে অভিযানও চলছে। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ৬৫ জনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ। ২৪ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪১ জনকে আটক করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও। এখন নির্দ্বিধায় বলা চলে, বর্তমানে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে নাজুক অবস্থা, তার জন্য মাদকের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার একটি বড় কারণ।
দ্রুত এর গতি রোধ না করা গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘ্নিত হবে। আর সে জন্য ধরা পড়া অপরাধীদের সঠিকভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দ্রুততম সময়ে তাদের বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। শুধু অভিযান পরিচালনা করে কারবার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। মাদকের চাহিদা কমাতে পরিবার থেকে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ জন্য সম্মিলিত কার্যক্রম প্রয়োজন।