English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

সুপারস্টার অনেকেই, ইলিয়াস কাঞ্চন হতে পারেন ক’জন

- Advertisements -

হাসান সাইদুল: বছর তিনেক গত হবে, সিঙ্গাপুর নাতনির চিকিৎসা করাতে যান ইলিয়াস কাঞ্চন। লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। কিন্তু সেখানে হাসপাতালে গিয়ে খুব অল্প টাকায় নাতনির অসুখ সারান। কিন্তু যেহেতু লক্ষাধিক টাকা অনুমান করেছেন তা লাগেনি। চাইলে ওই টাকা খরচ করে আয়েশে ঘুরাফেরা করতে পারতেন। না, তা না করে তিনি বাংলাদেশে এসে আরো কিছু টাকা যোগ করে মানুষকে দান করেন গোপনে। তিনি ভাবেন আল্লাহ তো আমার নাতির চিকিৎসা খরচ আরো বাড়াতে পারতেন; তা তো হয়নি। কিন্তু এ টাকা আমি রাখব না, অন্যকে দান করব। এমন অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে তার। তিনি আমাদের বিখ্যাত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

অভিনয়জীবনে নির্মাতারা তার বিরুদ্ধে সব সময় দুটি অভিযোগ করতেন। কাঞ্চন কখনো সময় নষ্ট করতেন না। সময় পেলে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে পড়তেন, অনুশীলন করতেন। কখনো যদি শুটিং আগে আগে শেষ হয়ে যেত তবে নির্মাতাকে বসিয়ে রাখতেন, ‘ভাই, কালকের পার্টটা যেমন হবে দেখি এটি আপনার সামনে অনুশীলন করি।’

ইলিয়াস কাঞ্চন কখনো কোনো নির্মাতাকে বাধ্য করতেন না বা প্রস্তাব দিতেন না যে, আমার সাথে অমুক শিল্পী কিংবা ওই নায়িকাকে নিতে হবে। কাঞ্চন জানতেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে অভিনয়ের আগে পরপর ১৯টা ফ্লপ ছবির নায়িকা ছিলেন অঞ্জু ঘোষ। তবু নির্মাতাকে একবারও বলেননি, এ নায়িকার সাথে কাজ করব না।

ইদ্রিস আলী- ইলিয়াস কাঞ্চনের গল্প বলতে গেলে অনায়াসে বর্তমান সময়ের ১২ কি ১৪ বছর বয়সী যে কেউ হয়তো বলবে, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির নাম। হয়তো তার পর আরো দু’-একটা ছবি কিংবা ছবির গানের কথা লিখবেন। কারণ অনেকের কাছে এ পরিচয়ই হয়তো বেশি। তিনি আমাদের ‘ইলিয়াস কাঞ্চন’।

অজপাড়াগাঁও থেকে আসা একটি সাধারণ ছেলের স্বপ্ন, নায়ক হবে। বাস্তব জীবন ও বিনোদন জগৎ নিয়ে মানুষের ধারণাকে বদলে দেয়াই তার লক্ষ্য। পারলেনও তিনি, হলেন সেরাদের সেরা। তার সময় ঢালিউডে ১১ জন নায়ক দক্ষতার সাথে কাজ করে আসছেন। তাদের মধ্য দিয়েই সেরা হলেন কাঞ্চন। তার সেরা হওয়ার ধরন কিংবা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অনেক বলা যায়।

Advertisements

জন্ম ১২ ডিসেম্বর। ভোটার আইডি কার্ডে ভুল করে জন্মদিন হয় ২৪ ডিসেম্বর। চলচ্চিত্রে তার জন্ম ১১ নভেম্বর ‘বসুন্ধরা’ ছবি মুক্তির মধ্য দিয়ে। প্রথম অভিনয় শুটিং, একটি লটারি বিজয়ী হয়ে রাস্তা দিয়ে বাসায় ফেরা যা এক শটে ‘ওকে’ হয়। ২২ অক্টোবরের কথা মনে আছে?

এ দিনে নতুন এক ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্ম হলো। বিচিত্র চরিত্রে তিনবার জন্ম নেয়া কাঞ্চন অনেক বারই মরতে পারতেন, মরতে যাচ্ছিলেন। প্রবাদ আছে বীরেরা মরে একবার তাই তিনি বারবার মরতে গিয়ে বেঁচে যান। হাত পা ভেঙে যায়। দুর্ঘটনায় পড়েন। চিকিৎসকরা বলেও দেন, ‘আর সুস্থতায় ফিরবেন না’। অথচ আজও তিনি সুস্থ, আমাদের ইলিয়াস কাঞ্চন।

এখনো অনেকেই বলেন কাঞ্চন মানে একটি ছবি একটি নাম, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। কিন্তু এ ছবি করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে যাচ্ছিলেন কাঞ্চন। কারণ অনেক; তবে মূল কারণ নায়িকা। পর পর ১৯ ছবি ফ্লপ হয়ে আসছিল অঞ্জু ঘোষের। ২০ নাম্বার ছবি হতে যাচ্ছে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। অন্য দিকে প্রচণ্ড ব্যস্ত কাঞ্চন। তার পরও ব্যাটে বলে মিলে। ছবিও মুক্তি পায়। কাঞ্চন বলেন, ‘এটি আল্লাহর মেহেরবানি’। এ ছবি খুব বেশি খ্যাতি এনেছে কাঞ্চনের এটা বলা ঠিক হবে না। কারণ এর আগে তার একাধিক ছবি মুক্তি পায়। মুক্তি পায় তার ক্যারিয়ারের সেরা ছবি ভেজা চোখ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, বেনাম বাদশাসহ একাধিক হিট ছবি।

আসলে আমরা শুধু সফলতার শীর্ষে থাকা কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রিয় মানুষকেই বিবেচনা করি। কিন্তু কিভাবে তিনি শীর্ষত্ব পেলেন সে গল্প অনেকেরই অজানা বা কেউ হয়তো জানতেই চায় না। বুকে কষ্ট ধারণ করে চলা চলচ্চিত্রের এক সুখী মানুষের নাম ইলিয়াস কাঞ্চন। তার হারানো অনেক কিছু আছে। প্রতিদানে হয়েছেন ‘ইলিয়াস কাঞ্চন’।

আমরা আজ গর্ব করেই বলতে পারি আমাদের অনেক মেগা স্টার আছে কিন্তু একজন মাত্র ইলিয়াস কাঞ্চন আছেন। অভিনয়ে খ্যাতির চূড়ায় থেকে আবার শুরু করেন কষ্টে ভরা একটি সংগঠন, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। বছরের পর বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য। যে মানুষটা অন্তত চার যুগের কাছাকাছি সময় আলোকিত করে রেখে আসছিলেন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে। একই ভাবে দুই যুগের বেশি সময় নীরবে কাজ করে আসছেন মানুষের জন্য সড়কে সড়কে। টেলিভিশন কিংবা সিনেমার পর্দায় যাকে দেখে করতালিতে মুখরিত সবাই। সে মানুষই বাস্তব জীবনে কোনো করতালির আশা ছাড়াই কাজ করে আসছেন।

এটা সত্য, অনেকের কষ্ট কারো কারো অভিযোগ রূপালী পর্দার সেরা নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনেরই কি দায়? তিনি একাই কি সড়ককে নিরাপদ রাখার স্লোগান দিয়ে যাবেন? সড়কে কি দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মচারী, মন্ত্রী এমপি কিংবা কোনো তারকা চলেন না? তাদের কি এতে কোনো অংশগ্রহণ দরকার নেই?

Advertisements

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান দক্ষিণী চলচ্চিত্রের মেগাস্টার পুতিনের মৃত্যুর পর তার সব দাতব্য প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনগুলোর খরচের দায়ভার নেন তারই এক সহকর্মী। হলিউড মেগাস্টার পল ওয়াকার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার দাতব্য সংস্থা চালু হয়, সে সংস্থার অন্যতম সদস্য হন তারই সহকর্মী অভিনেতা ভিন ডিজেল। পল ওয়াকারের মৃত্যুর পর তার নামে দাতব্য সংস্থাটি চালিয়ে নিচ্ছেন ভিন ডিজেল। এমন অনেক সুপারস্টারকে পাওয়া যাবে, যারা তাদের অভিনয় এবং বিলাসী জীবনের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য। সমাজসেবক হিসেবে উজাড় করে দিচ্ছেন নিজেদের আয় করা অর্থ। আমরা এখন গর্ব করতে পারি আমাদেরও একজন সুপারস্টার মেগাস্টার ইলিয়াস কাঞ্চন আছেন। কিন্তু তিনি তা কত দিন চালিয়ে নিয়ে যাবেন? তার সহকর্মী কিংবা শোবিজের কোনো স্টার কি তার হাত শক্ত করতে এগিয়ে আসছেন?

নীরবে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। প্রিয় চলচ্চিত্রের কারো ওপর কোনো অভিযোগ নেই কাঞ্চনের। বুকে সাহস রেখে বলেন, না তারা আমার সঙ্গে আছে। যখন আমাকে ব্যঙ্গ করা হচ্ছিল, যখন আমাকে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছিল তখন চলচ্চিত্রের অনেকেই এগিয়ে আসছে, প্রতিবাদ করেছে।

তবে এ প্রতিবাদই যথেষ্ট? নাকি তার এ সংগঠনকে দীর্ঘ করতে এখনো শোবিজ তারকাদের কাঞ্চনের সাথে হাত মিলানো উচিত?

সাত দিন আগে বান্দরবানে শুটিং করতে যান কাঞ্চন। সাত দিন পরই প্রিয়তমা স্ত্রী কাছে আসবে। মাথায় ঢুকিয়ে রাখা এ রোমান্সটাকে পুঁজি করে শুটিং করছেন কাঞ্চন। হঠাৎ খবর আসে, কাছে আসতে থাকা প্রিয়তম স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। শুনে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেন। তার আগে বারবার মৃত্যুর কোলে পতিত হন। অন্যদিকে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের অন্যতম শক্তিশালী ইতিহাস গড়া এক মেগাস্টার। শত বাধা, কষ্ট আর অসহনীয় যন্ত্রণা বুকে জমা রেখে যদি ইলিয়াস কাঞ্চন মানুষের জন্য কাজ করে আসতে পারেন, আপনি আমি কি পারি না তার কাজ, তার হাতকে বেগবান, আরো শক্তিশালী করতে?

পৃথিবীতে কিছু মানুষ হৃদয় ভাঙাই হয় কিন্তু ভাঙতে দেয় না অন্য কারো হৃদয়। তার পৃথিবীর কোনো মানুষের জন্য অপেক্ষা কিংবা ভরসা করে না। নিজেই শুরু করে চালিয়ে নিয়ে যায় কাজ। বসে নেই ইলিয়াস কাঞ্চন।

চলুন না, তার হাতকে শক্ত করি। আমরাও সহভাগী হই। শিখি, চলতে চলতে বলতে আর দেখতে দেখতে হয়তো একটা সময় তার যোগ্য সহচর হবো। দেশের জন্য দশের জন্য, কাজ করতে হবো বদ্ধপরিকর।

2 মন্তব্য

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
2 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Abdur Rahim
Abdur Rahim
2 years ago

love you bro..🌹🌹

Masum Billah
Masum Billah
2 years ago

তবে সবাইকে ১২ ডিসেম্বরই জন্মদিন পালন করা উচিত, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্মতারিখ পালন না করে।

Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন