ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘একটি চোখের জন্য চোখ কেড়ে নেওয়া মানে পুরো বিশ্বকে অন্ধ করে তোলা।’ অহিংসবাদী ছিলেন গান্ধীজি। তাই হয়তো এমনটা ভেবেছিলেন। কিন্তু প্রায় ১৫ হাজার মানুষ হত্যার পেছনে জড়িত ব্যক্তি যখন সরকারি নিরাপত্তায় পালিয়ে যায়, তখন ক্ষমা আর অহিংসার আদর্শের কী অর্থ দাঁড়ায়?
একজন সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্ন দিয়ে শুরু হয় ‘দ্য রেলওয়ে মেন’ ওয়েব সিরিজ।১৯৮৪ সালে ভারতের ভোপালে গ্যাস লিক ট্র্যাজেডি কেন্দ্র করে এই সিরিজ বানিয়েছেন শিব রাওয়াইল। অভিনয় করেছেন কে কে মেনন, আর মাধবন, সানি হিন্দুজা, জুহি চাওলাসহ উদীয়মান বেশ কয়েকজন শিল্পী। চার পর্বের সিরিজটি মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফরম নেটফ্লিক্সে।
এর মধ্যেই ঘটনাচক্রে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা একত্রিত হন। পর্যাপ্ত সহায়তাসামগ্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছাড়াই তারা সহস্রাধিক মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় চরিত্রকে দেখা যায় বেশ শান্ত ও উদার হিসেবে। এমন আরো কয়েকটি চরিত্র আর ঘটনাপ্রবাহ মিলে আবেগীয় পরিবেশ তৈরি করে। শেষে তাদের নামের সঙ্গে বীরত্বের খেতাব জুড়ে যায়।
গড়পড়তা বেশির ভাগ ওয়েব সিরিজই এখন এমন ‘টেমপ্লেট’ ব্যবহার করে নির্মিত হচ্ছে। ফলে ব্যাংক ডাকাতির মতো (মানি হেইস্ট) ঘটনার পরও ডাকাতরা দর্শকের আবেগীয় সমর্থন পেয়ে নিষ্পাপ হয়ে যান। ‘দ্য রেলওয়ে মেন’ সিরিজেও এমন চেষ্টা লক্ষণীয়। ভোপাল ট্র্যাজেডির সময় রেলওয়ের কল্পিত কয়েক কর্মকর্তা যে বীরের ভূমিকা পালন করেছেন, সে দিকটি ফুটিয়ে তুলতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন চিত্রনাট্য সংশ্লিষ্টরা। এ কারণেই সিরিজে আমরা দেখতে পাই, বিষাক্ত গ্যাসের কারণে অন্যরা যেখানে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণ হারাচ্ছেন, সেখানে সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র (কে কে মেনন) মাস্ক ছাড়াই দীর্ঘ সময় বেঁচে আছেন। পূর্বপ্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মৃত সহকর্মীর স্বজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন। মাঝখানে জ্ঞান হারালেও কয়েক ঘণ্টা পর অলৌকিকভাবে তাঁকে আবার জেগে উঠতে দেখা যায়!
সিরিজে সুযোগ বুঝে বাস্তব ঘটনার কিছু ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ভোপালের রাস্তাঘাটে মৃতদেহ, হাসপাতালে মানুষের ভিড় দেখা যায়। অর্থাৎ বাতাসে মিশে যাওয়া বিষাক্ত গ্যাসে সবাই সমানভাবে ভুক্তভোগী হয়েছেন। কিন্তু সিরিজে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরাই (কে কে মেনন, আর মাধবনসহ অন্যরা) যেন শুধু ব্যতিক্রম। তাদের সংগ্রাম আছে, পাশাপাশি আছে টিকে থাকার অতিমানবীয় গুণ।