নাসিম রুমি: টানা নয় মাস বন্ধ থাকার পর আজ (১ নভেম্বর) থেকে আবারও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলো দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। তবে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় এবার পর্যটকদের মানতে হবে ১২টি কঠোর নির্দেশনা। এসব নির্দেশনা মেনে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, “সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন। আগে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে সরাসরি পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।”
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম জানান, “সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের অবশ্যই ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিন যাবে। আইনগত কারণে উখিয়ার ইনানী থেকে যাতায়াতের অনুমতি থাকবে না।
গত ২৭ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিগত সম্মতি প্রদান করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে পর্যটক যাতায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, “সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলবে না।
পর্যটকদের অনলাইনে কিউআর কোডযুক্ত টিকিট ক্রয় বাধ্যতামূলক। ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটক উপস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
নভেম্বরে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ; ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন। রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান বা বারবিকিউ করা নিষিদ্ধ।
কেয়াবনে প্রবেশ বা কেয়া ফল সংগ্রহ–বিক্রয় করা যাবে না।
কাছিম, পাখি, প্রবাল, শামুক–ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কঠোরভাবে দণ্ডনীয়। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ।
পলিথিন বহন করা যাবে না; একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজের পানির বোতল বা ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ ছিল। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস সীমিত আকারে পর্যটন চালু করা হচ্ছে।
