রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল শুক্রবার ভূমিকম্পে আতঙ্কে সহস্রাধিক লোক অজ্ঞান, হার্ট-অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সারা দেশে গতকাল সকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫০৪ জন হাসপাতালে এসেছে।
তবে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হার্ট-অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ও অজ্ঞান হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের সহস্রাধিক এসেছে। তাদের ৯৮ ভাগকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, কোনো অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে শিশুসহ সবাইকে নিরাপদ স্থানে থাকা ও শান্ত থাকতে হবে। ভীতি সঞ্চার হলে অনেক শিশু ভয় কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে।
এ অবস্থা থেকে কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। হৃদরোগ ও বয়স্ক লোক কিংবা বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের শান্ত থাকতে হবে। তাদের ঐ সময় নিরাপদ স্থানে আশ্রয়সহ ধৈর্য্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
বিশিষ্ট স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ও নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, আমার বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে। এ ধরনের ভূমিকম্প দেখেনি। গতকাল উক্ত হাসপাতালে জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখেন, ১০ জন শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ চোখ বন্ধ করে রয়েছে। চিকিৎসকদের পরিচর্যায় বয়স্করা চোখ খুললেও শিশু কয়েক জন চোখ খোলেনি। নানা পন্থায় তাদের সেবার পাশাপাশি চোখ খোলার চেষ্টা চালিয়ে যান চিকিৎসকরা।শিশুরা চোখ খুলে আবার বন্ধ করে।
এভাবে কয়েক বার করার পর চিকিৎসকরা বলছেন তোমাদের কিছু হয়নি। তোমরা সুস্থ উত্তরে শিশুরা বলে এখন আবার ধাক্কা দিবে। ফেলে দিবে। কেউ কেউ বলে বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়বে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের ট্রমাটাইজ হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. বদরুল আলম জানান। ভূমিকম্পের নিরাপদ স্থানে শান্ত থাকা এবং প্রয়োজনে ৯৯৯ সাহায্য চাওয়ার পরামর্শ দেন।
দেশের অন্যতম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, আতঙ্কে বৃদ্ধরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। হার্টের রিদম উলটা-পালটা কাজ করতে পারে। হার্ট-অ্যাটাক হতে পারে। ব্ল্যাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। ভূমিকম্পনসহ যে কোনো দুর্যোগে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান এবং করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সফি আহমেদ মোয়াজ বলেন, ভূমিকম্পের মতো কোনো ঘটনায় শিশুদের নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। ঐ সময় কোনো অবস্থায় তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক শিশু এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদি ট্রমাটাইজ হতে পারে। স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্থ না হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে তিনি জানান।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শ্যামলী ২৫০ বেডের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালের প্রধান ডা. আয়শা আকতার বলেন, ভূমিকম্পনের সময় অস্থির কিংবা আতঙ্কিত না হয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ভূমিকম্পনে আহতসহ বিভিন্ন কারণে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬১ জন হাসপাতালে এসেছে। ছয় জনকে ভর্তি করা হয়েছে। একজন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
ইত্তেফাকের নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুরসহ স্থানীয় প্রতিনিধিগণ জানান যে, আতঙ্কিত হয়ে আহত, হার্ট-অ্যাটাক ও অজ্ঞান হয়ে অনেক লোক হাসপাতালে গিয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বেশির ভাগ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
