English

29.3 C
Dhaka
রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫
- Advertisement -

সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করলেন মা!

- Advertisements -

সব জল্পনা কল্পনা ও নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ১৭ দিন বয়সী নবজাতক হত্যার জট খুলেছে। বাবা, চাচা ও ফুফা কেউ নয় মা শান্তা আক্তার পিংকিই হত্যা করেছে তার নবজাতক সন্তানকে।
হত্যার বর্ণনা ও দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হত্যার শিকার শিশুটির মা শান্তা আক্তার পিংকি।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার  এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অন্যদিকে নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে নিহত শিশুটির বাবা সুজনের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তার মা ও বাবা।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, প্রথম থেকেই আমরা সোহানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পরিবারের সঙ্গে কথপোকথন ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করি। আমাদের ধারণা ছিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পরিবারের কেউ জড়িত ছিল। আমরা শিশুটির বাবা সুজন খানকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ এবং রিমান্ড আবেদন করি। আদালত সুজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমাদের মনে হয় নবজাতকের মা ও বাবাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। দুইজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটির মা আমাদের কাছে হত্যার বর্ণনা দেয়। নিজেই নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন।
পরে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোকন হোসেনের সামনে শিশুটির মা শান্তা আক্তার পিংকি হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন যা আদালত রেকর্ড করেছেন। সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোরেলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ঠাকুর দাস বলেন, হত্যার শিকার শিশুটির বাবা সুজন ও মা শান্তা দুই জনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল। শান্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বনগঞ্জ গ্রামের মো. ইউনুছ শেখের মেয়ে। ২০১৭ সালে একই এলাকার উজ্জ্বল ভুঁইয়া নামে এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেখানে শান্তার একটি মেয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালের দিকে শান্তার সঙ্গে বর্তমান স্বামী মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাবতলা গ্রামের সুজন খানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সূত্র ধরে শান্তা তার নাম পরিচয় ও বিয়ের বিষয় গোপন করে সুজনের কাছে চলে আসেন। ২০ দিন ধরে সুজনের বোনজামাই এনামুলের ঢাকাস্থ বাসায় থেকে বিয়ের পরে সুজনের বাড়িতে আসেন শান্তা। কিন্তু তার আগেরর বিয়ে ও সন্তানের কথা এই স্বামী ও তার পরিবারের কাছে গোপন রাখেন। আমরা মামলার সূত্র ধরে শান্তার বাবার পরিবার, আগের স্বামী-সন্তান ও কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সুজনের আগের স্ত্রী ও শান্তার আগের স্বামীসহ বিভিন্ন পারিবারিক ঝামেলার জন্য সে তার সন্তানকে হত্যা করতে পারেন এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা আরও জানিয়েছেন, তিনি রাতে ঘুমানোর পরে তার শরীরে প্রচণ্ড জালা শুরু হয়। নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে বাড়ির সামনের খাল, বাগান ও পুকুরের পাড়ে দৌড়াদৌড়ি করেন। একপর্যায়ে সন্তানকে পুকুরের ঘাটে জামরুল গাছের নিচে ফেলে দিয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে ঘুম ভেঙে সন্তানের জন্য কান্নাকাটি শুরু করেন শান্তা।
সুজনের প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম, খলিলুর রহমান, হাসি বেগমসহ কয়েকজন বলেন, শিশুটি হারিয়ে যাওয়া ও মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে আমরা খুবই চিন্তিত ছিলাম কীভাবে ঘটনা ঘটল এই চিন্তা করে। তবে এখন জানতে পারলাম সোহানার মা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য অপরাধীর কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা।
হত্যার শিকার নবজাতক সোহানার দাদা ও মামলার বাদী আলী হোসেন বলেন, আমার সন্তান সুজন খান নির্দোষ। আমি তার মুক্তি চাই। আমি নাতিও হারালাম, আবার ছেলেও জেলে এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সুজনের মা নাসিমা বেগম বলেন, আমাদের আদরের ধন সোহানাকে হারিয়েছে। আমাদের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। আমরা সুজনকে হারাতে চাই না। আমি সুজনের মুক্তি চাই।
এদিকে সুজনের বোন রজিনা বেগম বলেন, শান্তা ভাবি আমাদের বাড়িতে আসার পরে বেশ কয়েকবার অস্বাভাবিক আচরণ করে বেহুশ হয়ে পড়েছেন। আমরা তাকে স্থানীয় ওঝা-কবিরাজ দেখিয়েছি। তারা বলেছিল ভাবির সঙ্গে জ্বীন রয়েছে।
রোববার (১৫ নভেম্বর) রাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাবতলা গ্রামে বাবা সুজন খান ও মা শান্তা আক্তারের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল ১৭ দিন বয়সী নবজাতক সোহানা। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে তারা দেখেন শিশুটি হারিয়ে গেছে। সোমবার (১৬ নভেম্বর) ভোর থেকে পুলিশের একাধিক টিম শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করলেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিল না। সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা করেন শিশুটির দাদা আলী হোসেন খান। বুধবার ভোরে নামাজের পর নিজ ঘরের সামনের পুকুরে নাতির মরদেহ ভাসতে দেখেন আলী হোসেন। পরে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/obdb
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন