উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে গত সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আটকা পড়েন শিক্ষক পূর্ণিমা দাস। পরে অবশ্য অক্ষত অবস্থায় তারা সবাই ফিরে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষিকা দুই হাত জোর করে ভুল তথ্য না ছড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
পোস্টে পূর্ণিমা দাস লিখেছেন, ‘আমি মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের একজন শিক্ষিকা।আপনাদেরকে দুই হাত জোর করে বলছি, ভুল তথ্য ছড়াবেন না।আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম আমার চেয়ে বেশি আপনারা ফেসবুকবাসী জানবেন না, তাই না?
তিনি লিখেছেন, ‘স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়, আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো।কেউ ছিল না সবাই চলে গেছিল।আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন-চার মিনিট আগে থেকেই কিভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য এবং আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাই এ কিছু বাচ্চা ঢুকেছিল তাদেরকেও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়।’
‘এরপরেও আবার কয়েকজন (৫-৬ জন) ঢুকেছিল তাদেরকেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি।বা যারা করিডোরে, দোলনায় খেলছিল বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিল।বা ওই মুহূর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয়ভাবে ছিল’, যোগ করেন এই শিক্ষক।
তিনি লেখেন, ‘এরপর আসেন #cloud এ ওখানে বাচ্চার সংখ্যা (৮-১০) স্কাই এর চেয়ে বেশি ছিল।আমার ধারণা মাহরিন মিস, মাসুকা মিস ও মাহ্ফুজা মিস ওখান থেকেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করছিল।এবং তাদের বের করতে করতে নিজেরা ঝলসে যায়। যার মধ্যে মাহরিন মিস এবং মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি।মাহফুজা মিসের অবস্থা এখন গুরুতর উনি লাইফ সাপোর্টে আছেন।উনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘cloud এর পাশের রুম #mayna এখানে কিছু বাচ্চা ইনজিউরড্ কেউ মারা যায়নি। mayna এর পাশে #doyel এই ক্লাসের একটা বাচ্চা আর নেই। doyel এর পাশে #tuberose এবং #waterlily এখানেও সবাই সেফ আছে।’
পূর্ণিমা দাস লেখেন, ‘দ্বিতীয় তলার বাচ্চারদেরও ঘটনা একই।দুইটা ক্লাসরুম একটা টিচার্স রুম পুড়েছে। ওখানেও ১৫-২০ জন ছিল।হায়দার আলী ভবনের মুখে, দোলনায় এবং করিডোরের হাঁটাহাঁটি করা বাচ্চার সংখ্যা এভাবে বলতে পারা যায় না।অনুমানও করা কঠিন।তার মধ্যে অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে যে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এর মধ্যে আছে ওখানকার আয়ারাও।’
‘তাই ভুল তথ্য ছড়াবেন না।আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন সেটা একেবারে সম্ভব না।তার মধ্যে আমরা যারা দুই কর্নারে ছিলাম তারা তো অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি’, যোগ করেন এই শিক্ষিকা।
তিনি বলেন, ‘আর লাশ গুম করার কথা যারা বললেন, আপনাদের কতখানি মাথায় সমস্যা আমার জানা নেই। কারণ একটা বাচ্চা যাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি তার লাশটাতো অন্তত আমরা তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টাটা করব। তাই না? আমরা টিচার, রাজনীতিবিদ নই।’
পূর্ণিমা দাস লেখেন, ‘আপনাদের কোনো ধারণা নেই এই শিক্ষক শিক্ষিকাগুলো কিভাবে বাচ্চাদেরকে সারাদিন আগলে রাখে।ছুটি হওয়ার সময় মাহরিন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন বাচ্চাদেরকে অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। যতক্ষণ একটা বাচ্চারও অভিভাবক থাকে উনি গেট থেকে নড়েন না। তাই হাত জোর করে বলছি।ভুল তথ্য ছড়াবেন না।মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না।’
সবশেষে এই শিক্ষিকা লিখেছেন, ‘নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে আপনাদের বাড়াতে হবে না, আসেন আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝরে গেল।আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকা স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য আসেন আজ প্রার্থনা করি।’