উত্তরবঙ্গে শীত এবার যেন কঠোর রূপ নিয়েছে। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় যখন অনেকেই ঘরের উষ্ণতায় আশ্রয় নিচ্ছেন, ঠিক তখনই মহাসড়ক, ফুটপাত ও শহরের অলিগলিতে খোলা আকাশের নিচে কষ্টে রাত কাটাচ্ছেন অসংখ্য অসহায়, বাস্তুহারা ও বিপন্ন মানুষ। সেই দুঃসহ বাস্তবতায় মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত শহিদ উল্লাহ।
গতকাল গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটা যখন রাত ১২টা ছুঁইছুঁই, তখন দায়িত্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে মানবিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন বগুড়া শহর ও মহাসড়কের পথে পথে। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে ব্যস্ত মহাসড়ক—যেখানেই শীতের রাতে বস্ত্রহীন অবস্থায় মানুষকে শুয়ে থাকতে দেখেছেন, সেখানেই থেমেছেন। কোনো প্রটোকল নয়, কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়—নিঃশব্দে নিজ হাতে ভারী কম্বল জড়িয়ে দিয়েছেন শীতার্ত মানুষের গায়ে।
শীতের প্রকোপে কাঁপতে থাকা সেই মানুষগুলোর চোখে ছিল বিস্ময় আর কৃতজ্ঞতার জল। কেউ ভাবেনি, গভীর রাতে এমন একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা নিজে এসে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। কম্বল জড়াতে জড়াতে অনেকের মাথায় হাত রেখে তিনি খোঁজ নিয়েছেন—কেমন আছো, আরও কিছু দরকার কি না। এই দৃশ্য যেন পুলিশের কঠোর পরিচয়ের বাইরে এক মানবিক, সহমর্মী মানুষ শহিদ উল্লাহকে নতুনভাবে চিনিয়ে দিয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার শহিদ উল্লাহ বলেন, “পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগকারী শক্তি নয়, পুলিশ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি মানবিক দায়িত্বও বহন করে। এই শীতের রাতে যারা ফুটপাতে, মহাসড়কে বা খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছেন তাদের কষ্ট না দেখলে শান্তিতে ঘুমানো যায় না। আমরা যদি সামান্য সহযোগিতায় একজন মানুষের রাতটুকু একটু আরাম দিতে পারি, সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। শীতের প্রকোপে কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায় এই অনুভূতি থেকেই আমরা সারারাত রাস্তায় ছিলাম। আজ যদি পুলিশ মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারে, তাহলে মানুষের পুলিশের ওপর আস্থা আরও দৃঢ় হবে। মানবতার এই কাজগুলো আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী আগামীতেও চালিয়ে যেতে চাই।”
স্থানীয়দের মতে, এটি শুধু কম্বল বিতরণ নয়—এটি ছিল ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর মানবিকতার এক জীবন্ত বার্তা। শীতের রাতে যারা সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে হাইওয়ে পুলিশ সুপার দেখিয়ে দিয়েছেন—আইনের রক্ষক হওয়া মানেই শুধু আইন প্রয়োগ নয়, মানুষের কষ্ট বোঝাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
এই মানবিক উদ্যোগ উত্তরবঙ্গের শীতার্ত মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে সমাজের সামর্থ্যবানদের জন্য রেখে গেছে এক শক্ত বার্তা—মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য কখনো বড় মঞ্চ বা প্রচারের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন শুধু একটি বড় হৃদয়।
সারারাত থেকে ভোর পর্যন্ত টানা অভিযানে তিনি প্রায় শতাধিক শীতার্ত ও অসহায় মানুষের গায়ে নিজ হাতে ভারি কম্বল জড়িয়ে দেন। বগুড়া শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে ঢাকা–রংপুর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে যেখানে শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে মানুষ কষ্টে রাত কাটাচ্ছিল, সেখানেই ছুটে যান তিনি। মানবতার দায়বদ্ধতা থেকেই গভীর রাতেও থেমে থাকেননি এই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা।
