English

35 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

ময়দানহাট্টার ‘স্বর্ণগ্রাম’ প্রজেক্ট বাস্তবায়নে এলাকাবাসী সহযোগিতায় চলছে উন্নয়ন কাজ

- Advertisements -

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত অবহেলিত একটি গ্রাম দাড়িদহ। গ্রামটিতে ৫০০-৫৫০ টি পরিবারের মোট ৪৫০০জন লোকের বসবাস। গ্রামটির সামাজিক অবকাঠামো যেমন রাস্তাঘাট, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের তেমন কোন ছোয়া লাগেনি। বাল্য বিবাহ, মাদক, চুরির মতো কাজের সাথেও সম্পৃক্ততা ছিল এলাকার কিছু যুবক।

Advertisements

গ্রামটির সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন, বাল্য বিবাহ, ভিক্ষুক মুক্ত, মাদক, চুরি, অনলাইন গেম ও সামাজিক কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে গ্রামটিকে অত্যাধুনিক একটি গ্রামে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছেন ময়দানহাট্টা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সমাজ সেবক মাহবুব আলম মানিক।

প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার কাজ শুরু করা হয়েছে যা চলমান রয়েছে। তাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সহযোগীতা করছেন এলাকাবাসী। তিনি “উন্নত সমাজের বাস্তবায়ন চাই, সবার জন্য শিক্ষার বিকল্প নাই” এই স্লোগানে গ্রামটিতে ‘স্বর্ণ গ্রাম প্রজেক্ট’ নামের একটি ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। যার সহযোগীতায় আছেন “রকমারি বিতান”। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দাড়িদহ পানিতলা রোড়ের মোমেনা বকর কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ হতে দাড়িদহ মন্ডল পাড়া সেখান থেকে হাটুরা পাড়া ও বালু পাড়া পর্যন্ত ৩ টি রাস্তা যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৫ কিমি। রাস্তা গুলো ইট সলিং এর কাজ করা হচ্ছে যা পর্যায়ক্রমে সিসি ঢালাই এর আওতায় নিয়ে আশা হবে।

আগে যে রাস্তাটির প্রস্থ ছিল মাত্র ৮ ফিট তা বৃদ্ধি করে বর্তমানে ২২ পর্যন্ত ফিট করা হচ্ছে। রাস্তার পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ১১ টি ড্রেন নির্মানের কাজ ও চলমান রয়েছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছায় তাদের বাড়ি, ঘর, সীমানা প্রাচীর, দোকান ঘর ভেংগে দিয়ে রাস্তার উপরে থাকা গাছপালা কেটে রাস্তা বড় করতে সহায়তা করছে। গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, “আগে গ্রামের রাস্তা ভাল ছিলনা, ভ্যান রিক্সা চলতে পারতো না, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাঁদা জমে যেত, পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা ছিলনা, তাই দ্বিগুন ভাড়া দিতে চাইলেও কোন ভ্যান রিক্সা আমাদের গ্রামে আসতোনা। এখন রাস্তা প্রশস্থ হচ্ছে ইট সলিং এর কাজ করা হচ্ছে, এখন আমাদের অনেক সুবিধা হবে।” গ্রাম থেকে ভিক্ষুক মুক্ত ও মাদক মুক্ত করতে রকমারি বিতানের সহযোগীতায় মাদক সেবীদের পূর্ণবাসন করে ১১টি অটোভ্যান ক্রয় করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে গ্রামটিকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে ১১ জন ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীকে পূর্ণবাসন করা হবে। ড্রীম আইডিয়াল মাল্টিমিডিয়া স্কুলের ৮ম শ্রেনির প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তিশা আক্তার (১৪) বলেন, আমার বাবা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

Advertisements

স্বর্ণগ্রাম প্রজেক্ট এর কারনে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে এবং তাবলীগ করে। এই গ্রামের বিভিন্ন অপরাধমুলক পেশার সাথে জড়িতদের পূর্ণবাসন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তেমনি এক যুবকের নাম সোহেল। সে চুরির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। বর্তমানে তাকে পূর্ণবাসন করে রকমারি বিতানের সহযোগীতা সহজ কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকায় একটি অটোভ্যান দেওয়া হয়েছে। সোহেলের মা ওপেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে ভুল পথে ছিল। তাকে স্বর্ণগ্রাম প্রজেক্টের আওতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গ্রামের প্রবীন মুরুব্বী মুঞ্জুর রহমান, আবু তালেব, আফসার আলী আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা এই গ্রামটিকে একটি মডেল গ্রাম হিসাবে গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছি। সমাজ থেকে বাল্য বিবাহ, মাদক নির্মুল, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়নে স্বর্ণ গ্রাম প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত রাখবো। ঐ গ্রামের নারী জনগোষ্ঠী মুর্শিদা বেগম, মলি বেগম, জহুরা বেগম বলেন “আমরা আমাদের মেয়েকে বাল্য বিয়ে দিবোনা, আমাদের মেয়েদের কমপক্ষে এসএসসি পাশ করাবো। আমরা সবাই চাই ভালভাবে বাঁচতে।

‘স্বর্ণ গ্রাম প্রজেক্ট’ এর উদ্যোক্তা ও ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মানিক স্বর্ণগ্রামের ভিশন সম্পর্কে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আগামী ২ মাসের মধ্যে ভিক্ষুক এবং প্রতিবন্ধীদের পূর্নবাসন করা, আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাধ্যতামুলক সবাইকে মাধ্যমিক শিক্ষার আওতায় আনা, আগামী ১০ বছরের মধ্যে সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়ন করা, একটি স্কুল স্থাপন করা এবং উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা, গ্রামের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা, রাস্তাঘাট আগের চেয়ে প্রশস্থ করা হয়েছে এবং সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে পর্যায়ক্রমে রাস্তাকে সিসি ঢালাই এর আওতায় নিয়ে আসা, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মান করা, একটি কবরস্থান নির্মান করা, গ্রামের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রাস্তার পাশে ডাস্টবিন স্থাপন করা, এবং রাস্তায় সোলার প্যানেলের লাইট স্থাপন করা,শোভাবর্ধনের জন্য রাস্তায় দেবদারু গাছ সহ বিভিন্ন শোভাবর্ধক গাছ লাগানো হবে।” এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ফিরোজ আহমেদ রিজু বলেন, স্বর্ণগ্রাম প্রজেক্ট আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। গ্রামের সবার একতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এ প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে গ্রামটি হবে বাংলাদেশের মডেল।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন