কিংবদন্তী কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন-এর আজ দশম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
অভিনেতা সাইফুদ্দিন (সাইফুদ্দিন আহমেদ) ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে, ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ীতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ দীন আহমেদ (মঞ্চ অভিনেতা) এবং মাতার নাম মোসামৎ হাসিনা খানম। তাঁরা ছিলেন ৬ ভাই ৬ বোন।
স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই গান এবং অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রচন্ড আগ্রহ। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। অভিনয়ও করতেন। ভাল গান গাইতে পারতেন তিনি। স্কুল পাস করে ভর্তি হন, রংপুর কারমাইকেল কলেজে। কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের প্রসংশা অর্জন করেন।
পরে ঢাকায় চলে আসেন সাইফুদ্দিন। জানা যায় ঢাকায় এসে রেডিওতে গান গাইতেন এবং ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতেন। তখন তিনি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরিও করতেন।
সাইফুদ্দিনের ভগ্নিপতি আবদুল জব্বার খান পরিচালিত, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত, এদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে সাইফুদ্দিন চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন ।
সাইফুদ্দিন অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো- জোয়ার এলো, ময়নামতি, অবুঝ মন, নয়নতারা, নাচঘর, উজালা, পরওয়ানা, চাওয়া পাওয়া, বাঁশরী, পরশমণি, গাজীকালু চম্পাবতী, সমাপ্তি, আঁকা বাঁকা, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, জলছবি, বন্ধন, আমার জন্মভূমি, মধুমিলন, এরাও মানুষ, স্নপ্ন দিয়ে ঘেরা, হাবা হাসমত, আলোর মিছিল, লাঠিয়াল, জালিয়াত, বধূবিদায়, অলংকার, পলাতক, তুফান, অভিশাপ, সুন্দরী, নদের চাঁদ, কথা দিলাম, মাসুম, উজান ভাটি, হাসু আমার হাসু, আরাধনা, রামের সুমতি, মাটির মানুষ, মধুমিতা, অচেনা অতিথি, শ্রীমতি ৪২০, যৌতুক, শহর থেকে দুরে, রূপের রাণী চোরের রাজা, নওজোয়ান, স্মৃতি তুমি বেদনা, সোনার তরী, আকাশ পরী, স্বামীর ঘর, বড় ভালো লোক ছিল, গাঁয়ের ছেলে, দ্বীপ কন্যা, চন্দ্রনাথ, দহন, চাচা ভাতিজা,
সন্ধান, মেলা, সালমা, বেদের মেয়ে জোসনা, মোহনবাঁশী, কাশেম মালার প্রেম, গাড়িয়াল ভাই, শেষ উপহার,
বালিকা হলো বধূ, খলনায়ক, আবদুল্লাহ
নাজায়েজ, বাপের টাকা, হিংসার পতন, নাচনেওয়ালী, প্রভৃতি ।
সাইফুদ্দিন ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘সুন্দরী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন। টিভি মাধ্যমেও জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন সাইফুদ্দিন।
ব্যক্তিজীবনে সাইফুদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে, সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন।বিবাহিত জীবনে তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক ছিলেন তিনি ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনেতা সাইফুদ্দিন। সব ধরণের চরিত্রে অভিনয় করলেও, তিনি মূলত একজন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি আমাদের বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রের, প্রথম কৌতুক অভিনেতা।
আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তীতুল্য, পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন- চির অম্লান হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।
(ছবি- ফিরোজ এম হাসান)
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/1kqm
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন