ভিন্ন সম্প্রদায়ে বিয়ে করায় ভারতে অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তার বাবা ও স্বজনরা।
রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটক রাজ্যের ধরওয়াড় জেলার হুব্বল্লি তালুকের ইনাম বীরাপুর গ্রামে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নিহত তরুণীর নাম মান্য ধোড্ডামানি। তার বয়স ২০ বছর। তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং স্বামী বিবেকানন্দ ধোড্ডামানির সঙ্গে বসবাস করছিলেন।
হুব্বল্লি গ্রামীণ পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মান্যর বাবা প্রকাশগৌড়া পাতিলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দুই অভিযুক্ত হলেন- বীরানগৌড়া পাতিল ও অরুণগৌড়া পাতিল।
পুলিশ জানিয়েছে, মান্য লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের ছিলেন, আর তার স্বামী বিবেকানন্দ তফসিলি জাতিভুক্ত। চলতি বছরের মে মাসে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই হুমকির মুখে ছিলেন এই দম্পতি। সে কারণে তারা ধরওয়াড় ছেড়ে হাভেরি জেলায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে মান্য ও বিবেকানন্দের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রামে দেখা করা কঠিন হওয়ায় তারা মূলত ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ রাখতেন। পরে দুই পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে মে মাসে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে বিয়ে করেন। দু’জনই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিয়ের পর মান্যর পরিবার বিবেকানন্দের বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানার পর পুলিশ উভয় পরিবারকে ডেকে সতর্ক করে এবং মান্যর বাবা-মা জানান, তারা মেয়েকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বর মান্য ও বিবেকানন্দ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আবার ইনাম বীরাপুর গ্রামে ফেরেন। সন্তান জন্মের সময় হাসপাতালে ভর্তি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য আধার কার্ডসহ কিছু নথি সংগ্রহ করতেই তাদের এই ফেরা।
ঘটনার দিন মান্য একটি খামারে কাজ করছিলেন। সেখানেই তার বাবা ও অন্য আত্মীয়রা লোহার পাইপ দিয়ে তাকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। এ সময় মান্যর শাশুড়ি রেণাভ্বা ও আত্মীয় সুভাষ তাকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়।
ধরওয়াড়ের পুলিশ সুপার গুঞ্জন আর্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হামলার খবর পাওয়া যায়। গুরুতর আহতাবস্থায় তিনজনকে হুব্বল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মান্য মারা যান।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানা গেছে, হামলার সময় আরেকদল অভিযুক্ত বিবেকানন্দকেও আক্রমণের চেষ্টা করে। তিনি তখন তার ভাইয়ের সঙ্গে বাইরে ছিলেন। কোনওভাবে পালিয়ে গিয়ে তিনি থানায় আশ্রয় নেন।
হুব্বল্লি গ্রামীণ পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার পেছনের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
