জুবায়ের ইসলাম চৌধুরী: বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৭ বছরের ইতিহাসে ভাগ্যক্রমে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনীর এর মতো একজন পরিচালক পেয়েছে। যোগদানের পর থেকেই চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি ও হাসপাতাল সংস্কারে তিনি একের পর এক চমক দেখিয়ে প্রসংশায় ভাসছেন এই সেনা কর্মকর্তা।
স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৮ সালে বরিশালবাসীর জন্য এই হাসপাতালটি নির্মাণ করে পাকিস্তান সরকার। অথচ শুরু থেকে প্রায় ৪০ জন পরিচালক শেবাচিম পরিচালনার দ্বায়িত্ব পালন করলেও রাজনৈতিক দলের চাটুকার, দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং অদক্ষতার কারণে আশানুরূপ সাফল্য দেখতে পারেনি বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ।
সিন্ডিকেটের কারণে পিছিয়ে পড়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ। এছাড়াও নানান অনিয়মের কারণে মানুষের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি বাংলা বাঘ নামে পরিচিত শেরে-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হকের নামে প্রতিষ্ঠিত এই চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সময় হয়েছে আন্দোলন বা প্রতিবাদ কর্মসূচি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ৬ টি জেলা এবং ফরিদপুর, মাদারীপু, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা,বাগেরহাটসহ ১১ টি জেলার প্রায় ২ কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে ৫ শত শয্যার অনুমতি থাকলেও সময়ের দাবিতে সেটা ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়।
কিন্তু ১ হাজার রোগীর অনুমতি থাকলেও বর্তমানে শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। আর ভর্তি থাকছে ২ থেকে আড়াই হাজার মানুষ। ডাক্তার , নার্স, বেড, আয়া,বুয়া এমনকি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীও সংকট রয়েছে।
শুধু তাই নয় অসহায় মানুষের শত আশা ভরসার এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন নানান ধরনের সমস্যা নিয়ে দুলতে থাকায় নিজেই হয়ে পরে অসুস্থ। পাশাপাশি ব্যহত হয় চিকিৎসা সেবার স্বাভাবিক কার্যক্রম। তাই অতি দ্রুত হাসপাতালটি সংস্কার এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এ দিকে লক্ষ মানুষের চাওয়া পাওয়া ছিলো শেরে-ই-মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেনাবাহিনী থেকে একজন পরিচালক আসুক। সময়ের দাবি গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছর ২০২৪ সালের শেষের দিকে পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব প্রদান করেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনীরকে। শেবাচিম পরিচালক হিসেবে যোগদান করেই ইতোমধ্যে তিনি চমক দেখিয়েছেন যা এখন দৃশ্যমান।
এ বিষয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা: মো: মশিউল মুনীর বলেন, সেবা প্রত্যাশীদের অপার চাহিদা কিন্তু আমাদের সীমিত সম্পদ। তারপরেও আমি এই হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, ট্রলি ও এ্যাম্বুলেন্স চালকদের হয়রানি বন্ধ করেছি।হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি করতে বেড সংখ্যা বৃদ্ধি, মেডিসিন বিভাগ মূল ভবনে স্থান্তর, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, পাবলিক টয়লেট নির্মাণসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, সুন্দর্য বর্ধনে ফল, ফুল এবং ঔষধী গাছ রোপণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে বরিশালবাসী এই হাসপাতালের দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে পারবে। আর অবকাঠামো উন্নয়নসহ বড় পরিবর্তন পেতে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। সবাই আমাকে সহযোগিতা করুন আমি কথা দিচ্ছি শেবাচিম হাসপাতাল ইতিহাসের সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপহার দিব ইনশাআল্লাহ।