সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের পর প্রথমবার হোয়াইট হাউস সফরে যাচ্ছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, এমবিএস নামে পরিচিত – সৌদি আরবের কার্যত শাসক, আগামীকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
২০১৮ সালে খাশোগির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে উত্তেজনার পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনার কেন্দ্রে আসেন এমবিএস। সাত বছর পর এখন তিনি নিজেকে ‘শান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
রয়টার্স বলছে, তিনি এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং সিরিয়াকে ‘আরব অক্ষে’ ফিরিয়ে আনার জন্য স্বাগত জানাচ্ছেন। একসময় ইয়েমেনের যুদ্ধে ডুবে থাকার জন্য ‘বেপরোয়া’ হিসেবে পরিচিত এক রাজপুত্রের কাছ থেকে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সংস্কারবাদী এবং স্বৈরশাসক উভয়ভাবেই – এমবিএস আধুনিক ইতিহাসে রাজতন্ত্র শাসিত সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি একটি ‘রূপান্তর’ ঘটাচ্ছেন এবং দেশটির ভবিষ্যত গঠন কেমন হবে, তা নিয়ে কাজ করছেন।
মরুভূমির গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে দাদা বাদশাহ আব্দুল আজিজের রাজ্য গঠন এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে জোট গঠনের পর সাম্প্রতিক এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে ৪০ বছর বয়সী এমবিএস একটি ‘অদৃশ্য সামাজিক বিপ্লব’ ঘটিয়েছেন।
সৌদি আরবে দশকের পর দশক ধরে কঠোর সামাজিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করেছেন এমবিএস। নারীরা এখন গাড়ি চালান, কাজ করেন এবং পুরুষদের সঙ্গে অবাধে দেখা-সাক্ষাত করেন – একসময় এগুলোর শাস্তি ছিল বেত্রাঘাত।
রাজ্যে একসময় নারীদের বাধ্যতামূলক কালো আবায়া এবং হিজাব পরতে হতো, সেখানে এখন পপ তারকা এবং ফ্যাশন শো হয়।
কয়েক বছর আগেও অকল্পনীয় দৃশ্যে- জেনিফার লোপেজ এবং ক্যামিলা ক্যাবেলো সম্প্রতি রিয়াদের মঞ্চে উপস্থিত হন। লোপেজ একটি বডিস্যুট পরেছিলেন, ক্যাবেলো একটি গাউন পরেছিলেন। সেখানে হলিউডের মডেলরা উপস্থিতিতে দর্শকদের সামনে ক্যাটওয়াক করেন।
এসব বিষয়কে উন্মুক্ত করার পাশাপাশি, একই হাতে এমবিএস ক্ষমতার ওপর আধিপত্য আরও শক্ত করেছেন। দেশটিতে ভিন্নমত দমন করা হয়েছে, সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীনদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কারণে সৌদি আরবকে একঘরে করে দেওয়া উচিত। কিন্তু ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক বজায় রেখেই চলেছে।
২০২৫ সালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন সৌদি-মার্কিন লেনদেনের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনে। সৌদি আরব এখন ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দেশটি বেশ কিছু এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনবে বলেও খবর আসছে।
ওয়াশিংটনের আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্র ইনস্টিটিউটের সভাপতি ডগলাস এ. সিলিমান, ‘খাশোগির কথা ভুলে যাওয়া হয়নি। কিন্তু দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক কি কেবল একটি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা উচিত, নাকি যুক্তরাষ্ট্র বা সৌদি আরবের বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে?’
রয়টার্স জানিয়েছে, এমবিএস যখন ওয়াশিংটনে অবতরণ করবেন, তখন তাকে ভবিষ্যৎ রাজার মতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে।
ওয়াশিংটনের বিশ্লেষক স্টিভ ক্লেমন্স বলেছেন, ‘এটি রাজ্যাভিষেকের আগের একটি মুহূর্ত হবে।’ তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, রাজ্যের ভবিষ্যৎ এখন এই তরুণ রাজপুত্রের হাতে।
