English

26 C
Dhaka
শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
- Advertisement -

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: গোপালগঞ্জে ৪ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি

- Advertisements -

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আরতী বিশ্বাস ও বিধান বিশ্বাস দম্পতি এ বছর দুই বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করেছিলেন। স্বপ্ন ছিল জমিতে যে ফলস ফলবে তা বাজারে বিক্রি করে দুই ছেলেমেয়ের পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ চালাবেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সেই স্বপ্ন এখন ফিকে হতে বসেছে।

Advertisements

শুধু কৃষাণী আরতী বিশ্বাসই নয়, এমন গল্প গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষাণী আরতী বিশ্বাসের মতো কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান, টমেটো গাছ, শীতকালীন শাকসবজি, পেঁপে ও কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘের পাড়ে লাগানো টমেটো গাছসহ অন্যান্য গাছ জমিতে হেলে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে গাছে আসা ফুল ও ফল। পেঁপে ও কলা বাগানে সব গাছ ভেঙে নষ্ট হয়েছে।

Advertisements

নষ্ট হওয়া এসব ক্ষেতে একজন কৃষক ধারদেনা আর নিজের জমানো টাকা দিয়ে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন। এখন ফসল নষ্ট হওয়ায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হচ্ছে তাদের। ধারদেনা শোধ তো দূরের কথা, এখন কীভাবে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা আর সংসার খরচ চালাবেন সেই চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। নতুন ফসল করতে কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শসহ আর্থিক অনুদানের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি, কলা ও পেঁপের চাষ করা হয়েছিল। আমন ধানের ১০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে লতা জাতীয় সবজি এবং কলা ও পেঁপে ক্ষেতের। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, এ ঝড়ে জেলায় ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষাণী আরতী বিশ্বাস বলেন, নিজেদের কোনো জমি নেই। পরের দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে। দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। মেয়ে কলেজে আর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পুঁজি যা ছিল চাষাবাদে খরচ করেছি। ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে এখন সর্বশান্ত হয়ে পথে বসতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের কোনো আর্থিক সহায়তা না করে তাহলে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

একই এলাকার কৃষক শ্যামল মালাকার বলেন, গত বছর লাভ হওয়ায় এ বছর সাড়ে ছয় কাঠা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। গাছে ফুল ও ফল এসেছে। আগাম এসব ফল তুলতে পারলে টমেটো প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ করতে পারতাম। কিন্তু গাছ নষ্ট হওয়ায় যে ফুল এসেছে তাতে আর ফল হবে না। এখন আমি পুরোপুরি সর্বশান্ত হয়ে গেলাম।

কৃষক ভজন মালাকার বলেন, পৌনে দুই বিঘা জমি নিয়ে আমি কলাগাছের চাষ করেছি। ঝড়ের একদিন আগে জমিতে পাঁচ হাজার টাকার সার দিয়েছি। কিন্তু ঝড়ে আমার সব গাছ ভেঙে গেছে। একটি গাছেও ফল ধরবে না। এখন আমি কাঁদবো না হাসবো বুঝে উঠতে পারছি না। যে ক্ষতি হয়েছে তা আর কোনোভাবেই পূরণ হবে না। কৃষি বিভাগ যদি আমাদের সহায়তা না করে তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ক্ষতির পরিমাপ জরিপ করতে আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছি। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে সরকারকে জানানো হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেবে না আর্থিক প্রণোদনা দেবে তা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ক্ষতি যাতে আরও কম হয়, কৃষকরা যাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন