English

31 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

জ্বালানি তেলের দাম যেসব কারণে ওঠানামা করে

- Advertisements -

জ্বালানি তেল একটি পণ্য। জ্বালানি তেলের দাম কখনও স্থিতিশীল নয়; স্টক এবং বন্ডের মতো দাম ওঠানামা করে। জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করলেও প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা আলাদা কারণ থাকতে পারে। তবে এর কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো।

জ্বালানি তেলের দাম নানা কারণে ওঠানামা করে। কারণগুলোর অন্যতম হলো অরগানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক); রাশিয়ার মতো স্বাধীন পেট্রো-রাষ্ট্র; ExxonMobil-এর মতো বেসরকারি তেল-উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, পেট্রো-স্টেট বা তেল-রাষ্ট্র হলো এমন একটি রাষ্ট্র; যার অর্থনীতি প্রধানত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন এবং রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। আর Exxonmobil হলো বিশ্বের বৃহত্তম সর্বজনীনভাবে ব্যবসা করা আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর একটি।

জ্বালানি তেলের দামও অনেক সময় চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আবার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক সময় জ্বালানি তেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলে।

উৎপাদন খরচ এবং সংরক্ষণ ক্ষমতার ওপরেও জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা করতে পারে।

সুদের হারের ওপর অনেক সময় জ্বালানি তেলের দামে প্রভাব পড়ে থাকে।

জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামায় ওপেকের ভূমিকা

জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামার প্রধান প্রভাবক হলো ওপেক বা পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা। ওপেক হলো একটি কনসোর্টিয়াম। যা ১৩টি দেশ (২০২১ সালের হিসাবে) নিয়ে গঠিত : আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো, গিনি, গ্যাবন, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভেনিজুয়েলা।

২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ওপেক বিশ্বের তেলের মজুতের প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ওপেক, উৎপাদনের মাত্রাও নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে তেল উৎপাদন কমিয়ে বা বাড়িয়ে থাকে। যা তেলের দামকে প্রভাবিত করে।

২০১৪ সালের আগে, ওপেক অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের ওপরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের বেশি থেকে ৫০ ডলারের নিচে নেমে আসে। সে সময় ওপেক তেলের উৎপাদন না কমানোর ফলে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে যায়। উল্লিখিত উদাহরণে মনে হতে পারে ‘ওপেক’ তেলের সস্তা দাম হওয়ার অন্যতম কারণ। ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়।

সরবরাহ এবং চাহিদার প্রভাব স্টক বা বন্ডের মতো, তেলের ক্ষেত্রেও সরবরাহ এবং চাহিদার সংজ্ঞা দামে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হলে দাম পড়ে যায়; আবার চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়ে।

২০১৪ সালে ইউরোপ ও চীনে তেলের চাহিদা কম থাকায় এবং ওপেক থেকে তেলের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকার কারণে তেলের দামে নাটকীয় পতন ঘটে। তেলের অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে তেলের দাম সে সময় তীব্রভাবে কমে যায়।

সরবরাহ এবং চাহিদা বিবেচনায় ওপেক তেলের দামকে প্রভাবিত করতে পারলেও; ভবিষ্যৎ তেলের দাম সবসময় ওপেক-ই নির্ধারণ করে থাকে। ওপেক তেল বিক্রির জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের বা কোম্পানি সঙ্গে ভবিষ্যৎ-চুক্তি করে। যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা ভবিষ্যৎ-চুক্তির দামে তেল কেনার অধিকার লাভ করে। তেলের ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে চুক্তিতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট তারিখে লেনদেন সম্পন্ন করতে হয়।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়

তেলের দাম ওঠানামা করার আরেকটি বড় কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। উদাহরণস্বরূপ, হ্যারিকেন ক্যাটরিনা ২০০৫ সালে যখন দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানে, তখন মার্কিন তেল সরবরাহে প্রায় ২০ শতাংশ প্রভাবিত করেছিল। ফলে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ১৩ ডলার বেড়ে গিয়েছিল। ২০১১ সালের মে’তে মিসিসিপি নদীর বন্যাতেও তেলের দামের ওঠানামায় প্রভাব ফেলে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা

জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামার আরেকটি বড় কারণ মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। কারণ, বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের সিংহভাগ এই অঞ্চলটি থেকে হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তান ও ইরাকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে তেলের দাম বাড়তে বাড়তে ব্যারেল প্রতি ১২৮ ডলারের পৌঁছেছিল।

উৎপাদন খরচ ও সংরক্ষণ করার পদ্ধতি

উৎপাদন খরচের কারণেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে বা কমতে পারে। এর পাশাপাশি তেল সংরক্ষণ করার পদ্ধতিও একটা ব্যাপার। উত্তোলন খরচ কম হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের তেলে দাম তুলনামূলক কম থাকে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচের কারণে কানাডার আলবার্টার জ্বালানি তেলের দাম বেশি। এ ছাড়া উত্তোলনের সস্তা তেল শেষ হওয়ার পর, আলকাতরায় পরিণত হওয়া অবশিষ্টাংশ থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করলেও খরচ বহুলাংশে বেড়ে যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদনও সরাসরি তেলে দামকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের শিল্পে জ্বালানি তেলের অতি ব্যবহার হলে উৎপাদনে টান পড়ে, সরবরাহ কমে যায়, ফলশ্রুতিতে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ১২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল। আবার চাহিদার সঙ্গে গড় উৎপাদন ব্যাহত হলে বাণিজ্যের গতি কমে যায়। এভাবে দিনের পর দিন চললে দাম বাড়তে থাকে।

আবার সংরক্ষণাগারে তেলের মজুত বাড়তে থাকলে মূল কেন্দ্রের সংরক্ষণ ট্যাংকগুলো দ্রুত ভরপুর হয়ে ওঠে। যেমন ২০২০ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭৬ মিলিয়ন ব্যারেল ধারণক্ষমতার মধ্যে ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল পরিপূর্ণ করে ফেলে।

সুদের হারের প্রভাব

ক্রমবর্ধমান সুদের হার তেল উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়ের খরচ বাড়ায়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পেছনে কখনও কখনও এই কারণগুলো সম্পর্কিত, কখনও কখনও প্রভাবিত করে; আবার কখনও কখনও কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়ে।

যখন সুদের হার কমে যায়, তখন ভোক্তা এবং উৎপাদনকারী কোম্পানি অবাধে ঋণ নিতে সক্ষম হয়, এতে তেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সাধারণভাবে তেলের ব্যবহার যত বেশি হবে, ক্রেতাদের তত বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হবে।

ক্রমবর্ধমান বা উচ্চ-সুদের হার অন্যান্য দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলারকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। ডলারের দাম বেড়ে গেলে মার্কিন কোম্পানিগুলোর আরও বেশি তেল কেনার সামর্থ্য অর্জিত হয়। তখন দাম কিছুটা হলেও কমতে পারে, আর এভাবে সার্বিকভাবে ভোক্তা লাভবান হয়ে থাকে।

একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কম থাকলে মার্কিন কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য থাকে কম তেল কেনা। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন