বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ঐতিহ্যের অলিন্দে আঘাত হানা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। এটা করা হচ্ছে সবার চোখের সামনে। যেন দেখার কেউ নেই। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন অমান্য করে সেখানে গত ১১ বছরে নির্মাণ করা হয়েছে অন্তত ৯৯০টি বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হিসাবে, এই নগরীতে পাকা, সেমিপাকা, মাটির বাড়িসহ পাঁচ ধরনের বাড়িঘরের মধ্যে দোতলা-তিনতলা ভবনও রয়েছে। আর প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণের কাজ।
প্রাচীন দুর্গনগরী মহাস্থানগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় নির্মাণকাজ বন্ধ করার ব্যাপারে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। প্রথম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। গত বছর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আবারও স্থাপনা নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত আছে বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। যাঁরা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন তাঁরাও ওই এলাকায় বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। তাঁদের কাছেও কোনো বিকল্প নেই। হাইকোর্টের নির্দেশনায় দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কথাও বলা আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণ করলে এলাকার মানুষ জমি দিতেও চায়; কিন্তু অধিদপ্তর জমি অধিগ্রহণ করছে না।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক জানিয়েছেন, প্রাচীন এই নগরীকে রক্ষায় ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, নিজেদের প্রয়োজন আছে বলেই তারা ঘরবাড়ি তৈরি করছে। অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা স্থাপনা নির্মাণে বাধ্য হচ্ছে।
মহাস্থানগড়ে শুধু যে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে তা নয়, হারিয়ে যাচ্ছে প্রত্নসম্পদও। প্রকাশিত খবরেই বলা হয়েছে, শতাধিক বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে পাল ও সেন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নকশাখচিত ইট। মাটি খুঁড়ে বের করা এসব ইটের প্রতি ১০০টি সেখানে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
সরকারের জমি অধিগ্রহণের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এ ব্যাপারে যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে ততই উত্তম। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের এক মূল্যবান প্রত্ন ঐতিহ্য। এই প্রত্নসম্পদ ও ঐতিহ্য রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা মেনে দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/c4nv
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন