English

35 C
Dhaka
সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

আলোচিত নীলা এবার খুলনা কারাগারে

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

খুলনা: একের পর এক পুরুষকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। নিঃস্ব করেছেন বহু পুরুষকে।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি খুলনার বহুল আলোচিত নারী সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টির।২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নীলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার আগে ঢাকার ১৪ নম্বর আদালতে হাজির হয়ে প্রতারণার মামলায় জামিন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মাইনুল হোসেন তাকে জেলে পাঠান। সেই থেকে তিনি কারাবাস করছিলেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। এবার তাকে আনা হয়েছে খুলনা কারাগারে।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে খুলনা জেলা কারাগারের জেলার এনামুল কবির বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় জেরার জন্য নীলাকে রোববার গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খুলনা কারাগারে আনা হয়েছে। আজ খুলনার আদালতে হাজির করা হবে তাকে।

সাবেক এক স্বামী এম রহমানের মামলায় কাশিমপুর কারাগারে আটক ছিলেন নীলা। নীলা নিজে বাদী হয়ে খুলনাতে কয়েকটি মামলা দায়ের করেন তার প্রাক্তন স্বামীদের বিরুদ্ধে। দায়েরকৃত সেই মামলা সমুহের মধ্যে একটি চেক ডিজঅনার মামলায় জেরার জন্য তাকে খুলনায় আনা হয়েছে।

মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, নীলাকে মহানগর দায়রা জজ যুগ্ম-২ এর বিচারক মো. মনিরুজ্জামানের আদালতে আজ সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) হাজির করার কথা রয়েছে ।

নীলার সাবেক স্বামীদের ভাষ্য, খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুলতানুল আলম বাদলের মেয়ে সুলতানা পারভীন নীলা শারীরিক গঠন ও রূপ-যৌবনকে পুঁজি করে প্রতারণা করতেন। বিয়ের নামে ধনাঢ্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চাকরিজীবীদের ফাঁদে ফেলে কোটিপতি বনে গেছেন নীলা। যাদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে কথা কাটাকাটি হতো তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন-যৌতুক দাবি সংক্রান্ত একাধিক মামলা করতেন খুলনার আলোচিত এ নারী। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে সম্পর্কের সূত্র ধরে চেক চুরি করে অপর এক নারীর ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের ঘটনায় মামলা হয়।

একাধিক অভিযোগ ও অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, সুলতানা পারভীন নীলা বিয়ের পরপরই তার স্বামীদের কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নিতেন। পরে তালাক নিতেন। এটি মূলত তার ব্যবসা।

যেভাবে সম্পর্ক গড়তেন নীলা

জানা গেছে, সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষদের বিভিন্ন মাধ্যমে টার্গেট করতেন নীলা। পরে তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। একটা সময় গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন। এরপর থেকেই মূলত শুরু হতো তার দাবি দাওয়া। এসব দাবির মধ্যে প্রথমেই থাকতো বিয়ে। বিয়ের পর স্বামীর সম্পদ নিজের নামে করে নেওয়া। নগদ অর্থ, জমি, গাড়িও নিতেন নীলা। পরবর্তীতে স্বামীর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা শুরু করতেন। এটি থেকে তিনি পৌঁছাতেন তালাক পর্যন্ত।

এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিয়ে হয় নীলার। তার সে সময়কার স্বামীর নাম শাহাবউদ্দিন সিকদার। তিনি ছিলেন জাপান প্রবাসী, গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের হরিকুমারিয়া গ্রামে। নীলার বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। মালামাল চুরির ঘটনায় শাহাবুদ্দিন শিকদার মাদারীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (যার নং- ৭৩৮, তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯) করেন। ২০০১ সালে শাহাবুদ্দিন-নীলার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।

এরপর ২০০৫ সালের ৬ মে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোডস্থ এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় নীলার। দ্বিতীয় স্বামীর কাছে নিজেকে ‘কুমারী’ পরিচয় দেন তিনি। কাবিনে দেনমোহর ধরা হয় মাত্র এক লাখ টাকা। বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই নীলার উগ্র আচরণের শিকার হন মুনির। এক পর্যায়ে বিয়ের সময় পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও স্বামীর নগদ কিছু অর্থ নিয়ে ঘর ছাড়েন নীলা। এ ঘটনায় সে বছরের ১০ ডিসেম্বর মুনির হোসেন তাকে তালাক দেন। ২০০৬ সালে মুনিরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা করেন নীলা।

এর দুবছর পর আবারও একই দাবিতে নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোড এলাকার ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন নীলা। ২০০৮ সালের এপ্রিল হওয়া এ বিয়েতে শর্ত ছিল নীলা তার স্বামীকে অপর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ইতালি নিয়ে যাবেন। এতে তাকে দিতে হবে মোটা অংকের টাকা। বনি টাকা দিলে সেটি নিয়ে অন্তরালে চলে যান নীলা। এ সময় থেকে তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন বনি। পরে তাদের তালাক হয়।

এর কয়েক দিন পর নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করায় নীলার বিরুদ্ধে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন বনি। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি রুজু হয়েছিল। পরে নীলাও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন বনির বিরুদ্ধে।

এ মামলা চলমান অবস্থায় ২০১১ সালে নীলা বিয়ে করেন নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে একজনকে। তার কাছ থেকেও নগদ অর্থসহ সম্পদ লুট করেন নীলা। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ইফতেখার আমেরিকায় চলে যান। ২০১২ সালে নীলা বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে। ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিম ও ২০১৮ সালে খুলনার এম রহমানকে বিয়ে করেন।

২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকায় মো. আব্দুল বাকী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে নীলার বিয়ে হয়। বাকীর কাছ থেকে একটি চেক ও নগদ টাকা চুরি করেন নীলা। পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হলে বাকী বিষয়টি নিয়ে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে ২০২১ সালের ২২ মার্চ দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।

সবশেষ নীলার বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি জিডি দায়ের রয়েছে। এতে তার এক স্বামী অভিযোগ করেন, সিরাজগঞ্জে অবস্থানকালীন ঢাকার একটি ফ্ল্যাট নীলার নামে লিখে না দেওয়ায় নারী নির্যাতন মামলা ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের ২ মে জিডিটি দায়ের হয়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন