বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ে খালাস পেয়েছেন চারজন। মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, কামরুল ইসলাম সাইমুন এবং মো. সাগরকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তাদের মধ্যে মুসা পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন আদালত।
মামলার রায়ে খালাসপ্রাপ্ত কামরুল ইসলাম সাইমুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেন, খালাস পাওয়ায় তারা ন্যায়বিচার চেয়েছেন এবং তা পেয়েছেন। তিনি বলেন, সাইমুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২৬ তারিখ রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ওই ঘটনার পরে রিফাত ফরাজী তাকে ফোন দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বলেন। সাইমুন সেই মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যান এবং চাবি ও মোটরসাইকেল দিয়ে আসেন। সেই মোটরসাইকেলে রিফাত ফরাজী তার ছোট ভাই রিশান ফরাজী ও নয়ন বন্ড পালিয়ে যান। এটা হলো সাইমুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, কোনো মোটরসাইকেল এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করতে পারেনি। পাশাপাশি সাইমুন যে মোটরসাইকেল চালাতে পারে, তার যে মোটরসাইকেল ছিল বা তিনি যে মোটরসাইকেল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, এ বিষয়গুলো প্রসিকিউশন থেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। সাইমুন যে পটুয়াখালী ছিলেন এবং তাকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটা আমরা জানি। পাশাপাশি ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে এটা আমরা প্রমাণ করতেও সক্ষম হয়েছি। ফলে কামরুল ইসলাম সাইমুন নির্দোশ বলে প্রমাণিত হয়েছেন। তাই আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাকে খালাস দিয়েছেন।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সকাল ৯টায় একটি জায়গায় সবাইকে যেতে বলা হয়েছে আর সাগর সেখানে ইমোজি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তার ওখানে কোনো পার্টপ্লে কিংবা কলেজে যাওয়া কিংবা ভিডিওতে দেখা যায়নি। এছাড়া প্রসিকিউশন থেকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাকেও খালাস দিয়েছেন আদালত।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাফিউল ইসলাম রাব্বির বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, কলেজ পড়ুয়া এক বন্ধু ওই ঘটনার পর তার বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু রাব্বি এ ঘটনার খবর তখন জানতেন না। তাই স্বাভাবিকভাবে তার একটি ফ্রেন্ড এসে রাতে রয়েছে। কিন্তু যখন প্রকাশিত ওই ভিডিওটি ভাইরাল হয়, তখন ওই আশ্রিত বাসা থেকে চলে যায়। কিন্তু রাব্বির কোনো ইনটেশন ছিল না ওই বন্ধুকে আশ্রয় দেওয়ার। ফলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এছাড়া পলাতক আসামি মুসার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগও প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরের দিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। এরপর ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দু’ভাগে বিভক্ত করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য