English

28 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি: খাসিয়া যুবক নাকি পুলিশের পাতা ফাঁদ, কিভাবে গ্রেপ্তার হয় আকবর?

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে পুলিশের তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেউ বলছে পুলিশ, আবার কেউ বলছে রহিম নামের এক যুবক আকবরকে আটক করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকবরের আটকের ঘটনা নিয়ে নানা ধরনের ভুল তথ্য প্রকাশ করে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু আকবরকে কিভাবে আটক করা হয়েছে এ নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে আকবর গ্রেপ্তারের আসল রহস্য।
বিভিন্ন তথ্য প্রমাণে জানা যায়, রায়হান হত্যার পর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আকবর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে চলে যায়। সেখান থেকে চলে যায় আসাম প্রদেশের শীলচর শহরের অদূরে অবস্থিত গুমড়া এলাকায় এবং আশ্রয় নেয় গোপাল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। সেখান থেকে গোপালের মাধ্যমে আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে নিরাপদে বসবাসের জন্য এসআই আকবর সিদ্ধান্ত নেয়।
অপরদিকে রায়হান হত্যার পর আকবর ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছে এমন সংবাদ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তার অবস্থান নির্ণয় করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সিলেটের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা তৎপর হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে কিছুদিন পূর্বে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আকবরের হোয়াটসঅ্যাপ এ কথোপকথনের রেকর্ড যাচাই করে পুলিশ জানতে পারে এসআই আকবর শীলচর শহরের গুমড়া এলাকায় গোপাল নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান করছে। এরপর আশ্রয়দাতা গোপালের মাধ্যমে এসআই আকবরকে আটক করার জন্য পুলিশ ভারতে কয়েকজন বিশ্বস্থ সোর্স পিছনে লাগিয়ে দেয়। এতে আকবরকে ধরতে মোটা অংকের টাকা সোর্সদের পিছনে খরচ করে পুলিশ।
এদিকে আকবর তাকে গোয়াহাটিতে পৌঁছে দেয়ার জন্য গোপালের সাথে এক লক্ষ টাকার চুক্তি করে এবং সেই অনুযায়ী আশ্রয়দাতা গোপাল দিনক্ষণ ঠিক করে গত রোববার রাতে আকবরকে গোয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিজিৎ নামের এক চালকের এলট্রো কার ভাড়া করে। কিন্তু তারা পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী আকবরকে গোয়াহাটিতে না নিয়ে কৌশলে মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী সেনা রোড দিয়ে উখিয়াং পেট্রোলপাম্পের কাছে রোববার রাত ৩টায় পৌঁছায়।
তখন কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম আসামি আকবরকে লোভা সীমান্ত দিয়ে উদ্ধারের জন্য লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির এক জনপ্রতিনিধিসহ কানাইঘাটের বাসিন্দা সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিনের সহযোগিতা চায়। এতে শাহাব উদ্দিনরা দনা সীমান্তবর্তী এলাকার রহিম উদ্দিনকেও সঙ্গীয় করে নেয়। তারা রোববার থেকে কানাইঘাট থানা পুলিশের সাথে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন।
একপর্যায়ে রোববার রাত ২টার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাধ্যমে পুলিশের কথামতো বিশ্বস্থ কয়েকজন গারো লোকদের কুলিয়াং এলাকায় পাঠান। কিন্তু সেখানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে পাঠানো গারো দলটি আকবরের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। পরে আকবরকে সেখান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য পুলিশ সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিনকে বলে। এতে সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিন কুলিয়াং বস্তির উয়েস নামের এক খাসিয়া যুবকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তাদের কথামতে উয়েসসহ কয়েকজন খাসিয়ারা উখিয়াং পেট্রোলপাম্প নামক স্থানে পৌঁছায় এবং তারা রোববার ভোররাতে আকবরকে গোপারের কাছ থেকে বুঝে নেয়।
এরপর উয়েস বাংলাদেশে অবস্থানরত সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে। সেই যোগাযোগ অনুযায়ী সোমবার সকাল ৮টায় বহিষ্কৃত এসআই আকবরকে ভারতের দনা খাসিয়া বস্তিতে নিয়ে আসে উয়েস। তখন কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ থানার ওসিসহ পুলিশের একটি দল দনা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নেয়। এবং আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এতে সালেহ আহমদ, শাহাব উদ্দিন ও দনা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বাংলাদেশ সীমান্তের ১৩৩৫নং পিলারের কাছে যায়।
পরে দনা খাসিয়া বস্তি থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে আকবরকে নিয়ে আসার জন্য রহিম উদ্দিন সহ ৪/৫জনকে দনা খাসিয়া বস্তিতে পাঠানো হয়। সেখানে উয়েসসহ ভারতের দনা বস্তির খাসিয়াদের কাছ থেকে আকবরকে বুঝে নেয় রহিম উদ্দিনসহ কয়েকজন যুবক। ঐ সময় খাসিয়ারা আকবরের বেশ কয়েকটি ভিডিও ধারণ করে, যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরমধ্যে একটি ভিডিওতে শুনা যায়, রহিম উদ্দিন এক খাসিয়া ব্যক্তির মোবাইল থেকে সীমান্তে অবস্থানরত সালেহ আহমদকে ফোনে জানান, ওসি স্যারকে বলেন আকবর আমার কাছে আছে।
ভিডিওতে রহিম খাসিয়াদের বলে, কানাইঘাট থানার ওসি ও নানকা চেয়ারম্যান আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। এরপর সেখান থেকে আকবরকে বাংলাদেশের দনা সীমান্তের ১৩৩৫নং পিলারের পাশে অবস্থানরত শাহাব উদ্দিন ও সালেহ আহমদের কাছে নিয়ে আসে রহিম উদ্দিন। সেখানে তারা আকবরকে সাথে নিয়ে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। পরে সোমবার দুপুর ১টার দিকে দনা সীমান্তের ভিতরে আকবরকে নিয়ে আসলে সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থানরত কানাইঘাট থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম ও জকিগঞ্জ থানার ওসি নাসির আহমদ, চেয়ারম্যান জেমস্ লিও ফারগুসন নানকার উপস্থিতিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম স্যারের চৌকশ নেতৃত্বে নানা ধরনের পন্থা ও কৌশল অবলম্বন করে আকবরকে আটক করেছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেকের সহযোগিতা নিয়েছি। আকবরকে আটকের বিষয়ে আইনি জটিলতা থাকার কারণে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন