English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

বিয়ের প্রলোভনে গৃহবধূকে একাধিকবার ধর্ষণ, অতঃপর…

- Advertisements -

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গৃহবধূকে (৪৫) একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে সালিস বসে। সালিসে গৃহবধূ ও তার পরিবারকে তিরস্কার করা হয়। গৃহবধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু ওই গৃহবধূ ও তার পরিবার সালিসের সিদ্ধান্ত না মানায় উল্টো এলাকাছাড়া করার হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে তাদের।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করলে সেই মামলা তুলে নিতে বাদী ও পরিবারকে অব্যাহত হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে করে ওই গৃহবধূ ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।

ধর্ষণের ঘটনা জোর করে আপোস-মীমাংসার চেষ্টা ও মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওই গৃহবধূর মেয়ে বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার (২৪ এপ্রিল) মান্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কশব ইউনিয়নের চক চোঁয়ারদহপাড় গ্রমের মামুনুর রশীদ (৪৮) ও ওই গৃহবধূ ইউনিয়ন পরিষদের ৪০ দিনের কর্মসূচিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সেই সুবাদে মামুনুরের সঙ্গে গৃহবধূর পরিচয় হয়। সেই সুযোগে মামুনুর তাকে বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রলোভন দেখায়। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২৪ মার্চ মামুনুর তার নিজ বাড়িতে ও ৩০ মার্চ এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ওই গৃহবধূ তাকে বিয়ে করতে বলে মামুনুর তালবাহানা করতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে তাদের বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে গত ১৯ এপ্রিল ওই গৃহবধূ ও তার মেয়েকে কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেওয়া হয় এবং সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক বসানো হয়।

বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও স্থানীয় মাতব্বর চকবালু গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, নূর উদ্দীন ও শাহিন আলম, চক সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের একরামুল হক, চকচোয়ার গ্রামের লিটন হোসেন, নূর উদ্দিন ও মোজাফফর হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সালিসে গৃহবধূ ও তার পরিবারকে তিরষ্কার করা হয় এবং গৃহবধূকে দেওয়ার জন্য ধর্ষক মামুনুরকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু ওই গৃহবধূ ও তার মেয়ে এই সিদ্ধান্ত না মেনে সালিশ চলে আসেন। পরে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে গত বুধবার মামুনুরের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা করেন।

ওই গৃহবধূর মেয়ে অভিযোগ করেন, সালিশের সিদ্ধান্ত না মানায় এবং পরবর্তীতে মামলা করায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ও মাকে নির্যাতন করা মামুনুর এবং তাদের লোকজন মামলা তুলে নিতে অব্যাহতভাবে এলাকাছাড়া ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। আমার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে অন্যত্র থাকা। আমি স্বামী পরিত্যাক্তা। বাড়িতে কোনো উপযুক্ত পুরুষ মানুষ নাই। আমি, আমার নাবালক ছেলে ও মা বাড়িতে থাকি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মুঠোফোন বন্ধ থাকায় ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত মামুনুর রশীদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ধর্ষণের ঘটনা সালিশে মীমাংসার চেষ্টা ও গৃহবধূ এবং তার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কশব ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেক হইচই হচ্ছিল। ঘটনাটি জানার জন্য গৃহবধূ ও অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে আমি ইউনিয়ন পরিষদে ডেকেছিলাম। সেখানে কোনো সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি কিংবা কাউকে জরিমানাও করা হয়নি। বরং ঘটনা জানার পর আমি গৃহবধূকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগও সত্য নয়।

এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছেন। তবে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মীমাংসার চেষ্টা ও মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে ওই গৃহবধূর মেয়ে থানায় গতকাল একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন