১১ অক্টোবর থেকে আজ ৯ নভেম্বর। ভেতরে কেটে গেছে ২৯ দিন। এসআই (বরখাস্ত) আকবরকে যখন আজ দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়, তার পূর্ব মুহূর্তেও ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সন্দেহ ছিল মানুষের মনে। বিশেষ করে রায়হানের মা সালমা বেগম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সন্দেহের অবসান হয়েছে। ধরা পড়েছেন পুলিশের এই বরখাস্ত কর্মকর্তা। আজ সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী ডোনা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের একটি দল।
সীমান্ত এলাকার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আকবর চেষ্টা করেছেন পালিয়ে থাকার। এক্ষেত্রে দেশে অনিরাপদ বোধ করায় তিনি বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগান, চেষ্টা করেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ায়। এ উদ্দেশ্যে প্রথমে তিনি সীমান্ত এলাকায় পাড়ি জমান। সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের খাসিয়া পল্লিকেই বেছে নেন তিনি। আশ্রয় নেন ওই পল্লীতেই।
খাসিয়া পল্লিতে বেশভূষা পাল্টে ফেলেন তিনি। খাসিয়াদের পোশাক পরেন। গলায় ঝোলান পুঁতির মালা। পরিবর্তন আনেন চুলের স্টাইলেও। উদ্দেশ্য ছিল সময়-সুযোগ মতো সীমান্ত অতিক্রম করার। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়ে উঠছিল না। কেননা সেখানে ছিল কড়া নজরদারি। ফলে খাসিয়া পল্লীতে তাঁকে থাকতে হয়েছে বেশ কিছুদিন। একপর্যায়ে খাসিয়ারাই তাঁকে গ্রপ্তারে সহযোগিতা করেন। তাঁকে কৌশলে বাংলাদেশে পাঠান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ডোনা সীমান্তের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রেপ্তারের সময় আকবর আগ বাড়িয়ে পুলিশকে নিজের পরিচয় দেন। এ সময় তাঁর বেশভূষা অনেকটা খাসিয়া পল্লিতে বসবাসকারীদের মতো ছিল। গলায় পুঁতির মালাও দেখা যায়।
গত ১১ অক্টোবর বিকেলে সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমেদের (৩৫) মরদেহ পাওয়া যায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। তাঁরা রায়হানের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে ওই দিনই সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমেদকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
ওই ঘটনায়, এসআই আকবরসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। বরখাস্তদের মধ্যে রয়েছেন কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ ও টিটু দাস। প্রত্যাহার হওয়া তিনজন হলেন এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গত ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে রায়হান আহমদকে তুলে নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে তিনি মারা যান।
রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর ভারতীয় সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য