আমাদের শরীরে নীরবে প্রবেশ করে চলেছে এক বিপজ্জনক দূষক- মাইক্রোপ্লাস্টিক। শুধু পরিবেশে নয়, এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলো জায়গা করে নিচ্ছে আমাদের খাবারে, পানিতে, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরেও।
হার্টফোর্ডশায়ারের এক নিঃশব্দ গ্রামে, ১৮৪৩ সালে গম চাষের ফলন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এক গবেষণা শুরু করেন ভিক্টোরিয়ান ভূমিপতি জন বেনেট লজ। বছরের পর বছর ধরে গম, খড় ও মাটির নমুনা বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্রায় দুই শতক পরে সেই বোতল খুলতেই সামনে আসে এক চমকে দেওয়া তথ্য- মাটির মধ্যেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি।
আজ, সেই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শুধু মাটিতে সীমাবদ্ধ নয়, প্রবেশ করছে মানুষের দেহে- রক্ত, লালা, শ্লেষ্মা, বুকের দুধ, যকৃত, বৃক্ক, প্লীহা, এমনকি মস্তিষ্ক ও অস্থির মধ্যেও। বিবিসি প্রকাশিত এক গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক চিত্র।
২০২৪ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্ববাসী এখন ১৯৯০ সালের তুলনায় ছয়গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া এই দূষণের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো- এই কণা আমাদের শরীরে গিয়ে কী করছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ২০২৫ সালের শুরুতে লন্ডনের এক গোপন ল্যাবরেটরিতে চালানো হয় এক ব্যতিক্রমী গবেষণা। আটজন স্বেচ্ছাসেবককে মাইক্রোপ্লাস্টিক মেশানো দ্রবণ খাওয়ানো হয়। এই পরীক্ষা- বিশ্বের প্রথম ‘প্লাস্টিক চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’- মানুষের শরীরে প্লাস্টিকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।
পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
এখনো চলছে গবেষণা- আমাদের দেহে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক ঠিক কী প্রভাব ফেলছে, সেটা জানার লড়াই। তবে একথা নিশ্চিত, অদৃশ্য এক শত্রু নীরবে আমাদের শরীরের ভেতর বাসা বাঁধছে।