English

38 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

পোড়া ধ্বংসস্তূপে বাবা খুঁজছে মেয়ে, মেয়ে খুঁজছে মা, স্বামী স্ত্রীকে!

- Advertisements -

অসুস্থ স্বামী কাজ করতে পারেন না এ কারণে সংসারের হাল ধরতে তিন মাস আগে এই কারখানাটিতে কাজ নেন ফিরোজা বেগম। কারখানাটিতে আগুন লাগার পর তিনিও নিখোঁজ। তাই স্ত্রীর সন্ধানে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে এসেছেন স্বামী মো. জাহিদ।

পরভা চন্দ্র বর্মণ, চম্পা খাতুন, মো. জাহিদের মতো অনেকেই স্বজনদের খোঁজে ছুটে এসেছেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। তাদের কারও মেয়ে, কারও মা, কারও ভাগ্নে, কারও আবার দূরসম্পর্কের আত্মীয় অগ্নিকাণ্ডের পর নিখোঁজ রয়েছেন।

বর্তমানে স্বজনদের আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল মর্গ এলাকায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে।

মেয়ে কম্পা রানীকে খুঁজতে আসা বাবা পরভা চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ। তার মেয়ে কয়েকদিন আগে নানির বাড়ি বেড়াতে নারায়ণগঞ্জ আসে। স্কুল বন্ধ তাই কিছু আয়ের আশায় ছয়দিন আগে কারখানাটিতে যোগ দেয় কম্পা রানী।’

Advertisements

এখন কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর মেয়েকে আর খুঁজে পাচ্ছেন না পরভা চন্দ্র বর্মণ। মেয়ের কাজে যোগ দেয়া এবং নিখোঁজ হওয়ার বর্ণনা দিতে দিতেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি জুরে দেন এই বাবা। এ সময় ঢাকা মেডিকেল মোড় এলাকায় এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়।

মায়ের খোঁজে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আশা চম্পা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রাত ৮টায় কারখানার কাজ শেষে মায়ের সঙ্গে বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকেলে আগুনের পর আর মাকে খুঁজে পাচ্ছি না। পরে শুনলাম ঢাকা মেডিকেলে অনেকের লাশ এসেছে। ঢাকা মেডিকেলে এসেও মায়ের দেখা পাইনি। আমার মা কোথায় আছে, কেমন আছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’

চম্পার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের সদরে। কারখানার পাশে চম্পার বাবার একটি চায়ের দোকান আছে। তারা ছয় ভাই-বোন। চার ভাই রূপগঞ্জের বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজ করেন।

স্ত্রীর খোঁজে আসা মো. জাহিদ বলেন, ‘আমি আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছয় মাস ধরে বেকার আছি। আমি বেকার হয়ে যাওয়ায় তিনমাস আগে ছয় হাজার টাকা বেতনে আমার স্ত্রী কারখানাটিতে চাকরি নেন। ওভারটাইম দিয়ে মাসে আয় হতো ৯ হাজার টাকার মতো।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। কারখানাটির চারতলায় আমার স্ত্রী কাজ করত। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় দিকে সে অফিসে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। আমার স্ত্রী এখন কোথায় কী অবস্থায় আছে কিছুই জানি না। আমাদের একটাই মেয়ে। সে ওর মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে। আমি আমার স্ত্রীর খোঁজে এখানে এসেছি।’

বাবা হারা শান্তা মনি অভাবের সংসারের হাল ধরতে কাজ নেন সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানাটিতে। আগুনের ঘটনার পর তিনিও নিখোঁজ।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গে শান্তা মনির খোঁজে আসা তার মামা বলেন, ‘আমার ভাগ্নি কারখানাটি তৃতীয় তলায় কাজ করত। আগুন লাগার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

Advertisements

এদিকে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ৪৯টি মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে। মরদেহগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে থেকে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা দেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আসতে বলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ডিএনএ’র নমুনা রাখা বা মরদেহের পরিচয় শনাক্তে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই স্বজনদের ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে ডিএনএ নমুনা দিতে হবে।’

এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে। প্রথম কাজটি হবে মরদেহগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা। সবগুলো মরদেহ আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে। প্রয়োজনে তাদের মরদেহ ফ্রিজিং করা হবে। আত্মীয়দের সঙ্গে ডিএনএ সিম্পল মিলিয়ে পরবর্তীতে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে শ্রমিকরা ভবনের ছাদে জড়ো হন। ছাদসহ বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে। এতে ওই রাতেই তিনজনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, আহতও হন বেশ কিছু শ্রমিক।

সবশেষ শুক্রবার (৯ জুলাই) কারখানার পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়ায়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন