English

38 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

বাবার দাফন আটকে দিলো ছেলে! লাশ গেল মর্গে

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

কফিনে মোড়ানো হয়েছে লাশ। খোঁড়া হয়েছে কবর। জানাজার জন্য জড়ো হয়েছেন আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। কিন্তু হঠাৎ করেই নিহতের গৃহত্যাগী এক সন্তান বাড়ি ফিরে পিতার লাশ দাফন কাযর্ক্রম বাধা দেন।

৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশ ডেকে পিতার লাশ কবরস্থানে পাঠানোর পরিবর্তে মর্গে পাঠান তিনি। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের শ্রীবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারান জালাল উদ্দিন (৭০)। এরপর তার মরদেহ দাফনের সকল প্রস্ততি গ্রহণ করেন ৫ সন্তান ও স্বজনরা। জালালের কফিন মোড়ানো মরদেহ বর্তমানে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
পুলিশ, পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, নিহত জালাল উদ্দিনের ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ে। মেজো ছেলে নুরুল ইসলামের সাথে পরিবারের সম্পর্ক ভালো ছিলো না। অনেক বছর আগে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। বাবা-মার খোঁজ খবর নেন না। মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে বাবা ও ভাইদের নানা হুমকি ধামকি দিতেন। বছরখানেক আগে এ বিষয়ে নুরুল ইসলামের নামে পিতা জালাল উদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। গ্রাম্য সালিশ হয়েছে বহুবার।

গতকাল সকালে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে জালালের মৃত্যু হয়। এরপর ৫ সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজনরা তার জানাজার প্রস্ততি গ্রহণ করেন। কিন্তু জানাজার আগ মুহূর্তে হাজির হন মেজো ছেলে নুরুল ইসলাম। জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে তিনি অভিযোগ করেন, তার পিতাকে তিন ভাই মিলে হত্যা করেছে। ফোন পেয়ে ঘিওর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ গ্রামবাসীও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে লাশ দাফনে অনুমতি দেয়ার জন্য নুরুল ইসলামকে অনুরোধ জানান। কিন্তু তাতেও সম্মতি দেননি নুরুল ইসলাম।

নিহত জালাল উদ্দিনের বড় ছেলে তারা মিয়া জানান, তার ভাই নেশাগ্রস্থ। সন্তানসহ স্ত্রীও তাকে ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে গেছেন। এখন নুরুল ইসলাম কোথায় থাকেন কী করেন তা কেউ জানে না। বাড়িতে কারো খোঁজ খবর নেন না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাবার সম্পত্তির ওয়ারিশ দাবি করে আসছিলেন। বাবা দিতে রাজি না হওয়ায় বাবা ও ভাইদের লাঠি-দা দিয়ে মারপিট করতে আসতেন। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মাতবরসহ বহু মানুষের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেছেন তিনি। বছরখানেক আগে তার বাবা নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন। এই রাগেই বাবার লাশ দাফন করতে দেননি নুরুল ইসলাম।

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন মিয়া জানান, মৃত জালাল উদ্দিনের নামাজে জানাজা পড়তে তিনি শ্রীবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তার মতো অনেকেই এসেছিলেন। কিন্তু মেজো ছেলে নুরুল ইসলাম বাবার জানাজা বন্ধ করে পুলিশকে খবর দেন। তিনি বলেন, জালাল অটোরিকশার ধাক্বায় নিহত হয়েছেন এটা গ্রামের সবাই জানেন। কিন্তু নুরুল ইসলাম ভাইদের হয়রানি করার জন্যই মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে খবর দেন।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রওশন আলম মোল্লাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা নুরুল ইসলামকে পিতার লাশ দাফন করার জন্য অনুমতি দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। পরে পুলিশ জালালের লাশ মর্গের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, ৯৯৯-এ ফোন পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুনরায় পুলিশ পাঠানো হয়। সুরতহাল রিপোর্ট এবং স্থানীয়দের তথ্যমতো জালাল উদ্দিন অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন। কিন্তু তার মেজো ছেলে নুরুল ইসলাম ৯৯৯-এ ফোন করে অভিযোগ করছেন তার ভাইয়েরা মিলে তার বাবাকে হত্যা করেছে। তাই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ জানান, কফিনে মোড়ানো অবস্থায় জালাল উদ্দিনের মরদেহ রাতে হাসপাতাল মর্গে পৌঁছেছে। আজ শুক্রবার (১৮ মার্চ) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে বাড়ির পাশে অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহন হন জালাল উদ্দিন। তাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত জালাল উদ্দিন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মচারি ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন