English

31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫
- Advertisement -

সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেপাল: নতুন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা

- Advertisements -

নেপালে ‘জেন-জি’ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে কেপি শর্মা অলি সরকারের পতন ঘটার পর নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। ওই বিক্ষোভের পর দেশটির কার্যভার সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা রাষ্ট্রপতির সুরক্ষাসহ নতুন সরকার গঠনের ব্যাপারে জোর দিয়েছে। দেশটির সংসদ কার্যকর রয়েছে। ফলে সাংবিধানিক নিয়মের মধ্য দিয়েই নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, দ্য উইক।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করার পর তিনি কোথায় রয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। তিনি দেশ ত্যাগ করেছেন, নাকি সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে আছেন- সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেলের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, অলির পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্বে বহাল থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা কার্যক্রমের দায়িত্ব নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। এক ভিডিও বার্তায় নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল চলমান সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে বিক্ষোভকারীদের আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেলও বলেছেন, চলমান সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে সহযোগিতার জন্য তরুণ বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, নাগরিকদের উত্থাপিত দাবিগুলো আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যায়, যেখানে জেন-জি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণও থাকতে পারে।’

নেপালের সেনাপ্রধান বলেছেন, জাতীয় ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিক্ষোভে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে লুটপাট ও হামলার অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কাঠমান্ডুজুড়ে একাধিক সেনা চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহনের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাউডস্পিকারে সেনারা ঘোষণা দিচ্ছে, ‘অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নয়, ঘরে থাকুন।’ নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বসনেত জানিয়েছেন, তারা মূলত সেসব উপাদানকে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন, যারা সুযোগ নিয়ে লুটপাট ও আগুন লাগাচ্ছে।

নেপালের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও জানা গেছে, রাজধানীতে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের পর সশস্ত্র সৈন্যরা কাঠমান্ডুর রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। অস্থিরতা দমনে সেনাবাহিনী রাজধানীর সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা যানবাহন এবং লোকজনকে ব্যাপক তল্লাশি করেছে। রাজধানীকে ‘স্বাভাবিক’ করার জন্য তারা অনির্দিষ্টকালের কারফিউও অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।

এদিকে দুই দিন বন্ধ থাকার পর সেনাবাহিনীর তৎপরতায় গতকাল রাজধানীর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টিআইএ) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। টিআইএ সিভিল অ্যাভিয়েশন অফিস কর্তৃক জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত থাকা সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এখন পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নেপালের পার্লামেন্টে কোনো দলেরই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই আইনপ্রণেতারা খুব সম্ভবত একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন। এদিকে ‘জেন জি’ বিপ্লবীরা দেশে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। তারা সংবিধান সংশোধনের কথাও বলছে। এ ছাড়াও গত কয়েক দশকে দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতারা দেশের যে সম্পদ লুট করেছেন, তার তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এসঙ্গে ‘সেপ্টেম্বর বিপ্লবে’ নিহত ২২ জন যুবা আন্দোলনকারীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ারও দাবি তুলেছে। নিহতদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং আর্থিক সাহায্য প্রদান, সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা, বেকারত্বের সমাধান, অনুপ্রবেশ রোখার দাবিও জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। প্রতিবাদীদের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই আন্দোলন কোনো দল বা ব্যক্তির জন্য নয়, বরং সমগ্র প্রজন্ম এবং জাতির ভবিষ্যতের জন্য। শান্তি অপরিহার্য, তবে তা কেবল একটি নতুন রাজনৈতিক ভিত্তির ওপরই নির্ভর করবে।’

আন্দোলন হাইজ্যাক-এর অভিযোগ : দুই দিনের সফল হওয়া আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে জেনারেশন-জেড (জেন-জি) বিক্ষোভকারীরা। তারা বলছে, জেন-জিরা যা চাইছিল, সেটিতে তারা সফল হয়েছে। এর মধ্যে আবার বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্মের সংগঠনগুলো বলছে, সহিংসতা তাদের আন্দোলনের অংশ নয়। সুযোগসন্ধানীরাই বরং আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা ভাঙচুর ও লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে। সেনাবাহিনীও একে সমর্থন করেছে।

বিক্ষোভকারীদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের আন্দোলন অহিংস ছিল এবং থাকবে। তারা নাগরিক সুরক্ষা ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে কাজ করছে। গতকালের পর আর কোনো কর্মসূচি নেই বলেও জানানো হয়।

অলির জায়গায় কে আসছেন : সহিংস বিক্ষোভের পর নেপালে কে পি শর্মা অলি সরকারের পতন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল। প্রেসিডেন্ট পাওদেল খুব সম্ভবত নেপালি সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় রয়েছেন। তরুণদের বিক্ষোভের মুখে অলি সরকারের পতনের পর আগামী দিনগুলোতে নেপালের পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অলি কোথায় আছেন, তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। প্রেসিডেন্ট বা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের তাঁকে দায়িত্ব পালন করে যেতে অনুরোধ করার বিষয়টি অনেকেই অবাক করেছে।

নেপালের সংবিধানবিশেষজ্ঞ ভিমার্জুন আচার্য বলেন, ‘আমাদের সামনে এমন একটি পরিস্থিতি এসেছে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। কেবল সর্বদলীয় আলোচনার মাধ্যমে এর একটি সমাধান বের করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য আগে বিক্ষোভের অবসান হতে হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের জীবন ও অধিকারের সুরক্ষা জরুরি।’ তিনি এও মনে করেন, ১০ বছর আগে রচিত নেপালের বর্তমান সংবিধান কার্যত এখন অকার্যকর। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাই এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে নেপালের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ও তাঁর পূর্বসূরি কল্যাণ শ্রেষ্ঠার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের দুজনের বয়সই ৭০ পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিভিন্ন জনমঞ্চে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন এবং জেন-জির বিভিন্ন দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রেখেছেন।

যদিও অনেকে এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছেন, এই দুজনের যে কাউকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হলে ৩০ বছরের কম বয়সিদের এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ফলে আরও একটি নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি হলেন, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ। তাঁর বয়স ৩৫ বছর। তিনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং একজন র‌্যাপার। অলির কট্টর সমালোচক বালেন শাহ জনসমক্ষেই তাঁকে বারবার দুর্নীতিবাজ বলেছেন। তিনিও জেন-জিদের এ বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন। অলি সরকারের পতনের পর জেন-জিরা বালেন শাহকে দেশের নেতৃত্বে আসার অনুরোধ করেছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তরুণদের ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তরুণদেরই সরকার পরিচালনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে, নাগরিকদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে তারা শান্তি ও পারস্পরিক ঐক্যের মাধ্যমে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার ইঙ্গিতও দিয়েছে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/e8uu
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন