English

24 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

‘এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশ আর্থিক মন্দায় পড়বে’

- Advertisements -

কঠিন সতর্কতা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ। সংস্থাটির প্রধান ক্রিস্টিলিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ আর্থিক মন্দায় পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং চীনে অর্থনীতি ধীরগতির মুখে গত বছরের তুলনায় ২০২৩ সাল হবে আরও কঠিন। সিবিএস নিউজ প্রোগ্রাম ‘ফেস দ্য নেশন’-এ মিস জর্জিয়েভা এসব কথা বলেন। ১৯০টি সদস্য দেশ নিয়ে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএমএফ। বৈশ্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য তারা একসঙ্গে কাজ করে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে আগেভাগে অর্থনৈতিক সতর্কতা দেয়া অন্যতম। ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, সুদের উচ্চ হার এবং চীনে করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে। ২০২৩ সালের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অক্টোবরে কর্তন করেছে আইএমএফ। মিস জর্জিয়েভা বলেন, আমরা মনে করছি বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ অর্থনীতি মন্দায় পতিত হবে।

এমনকি যেসব দেশে মন্দা নেই, সেখানেও কোটি কোটি মানুষ মন্দার মতো পরিস্থিতি অনুধাবন করবেন। ওদিকে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে নিজের মূল্যায়ন বিবিসি’র কাছে তুলে ধরেছেন সিডনিতে মুডিস অ্যানালাইটিকসের অর্থনীতিবিদ ক্যাট্রিনা ইল।

তিনি বলেছেন, যদিও নতুন বছরে বৈশ্বিক মন্দা এড়াতে চাই আমরা, তবুও অস্বস্তি থাকবে উচ্চমাত্রায়। মন্দা থেকে মুক্তি পাবে না ইউরোপ। আর যুক্তরাষ্ট্র তো মন্দার দ্বারপ্রান্তে। এরইমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বৃদ্ধি করার ফলে ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা কর্তন করেছে আইএমএফ। তখন থেকেই জিরো-কোভিড নীতি বাতিল করেছে চীন। সেখানে নতুন করে করোনাভাইরাস দ্রুততার সঙ্গে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও দেশের অর্থনীতি উন্মুক্ত করা শুরু করেছে চীন।

মিস জর্জিয়েভা সতর্ক করেন এই বলে যে, এ অবস্থায় ২০২৩ সালের শুরুতেই কঠিন অবস্থায় যাত্রা শুরু করবে চীনের অর্থনীতি। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি হলো চীনের। তিনি আরও বলেন, সামনের কয়েকটি মাস চীনের জন্য খুব কঠিন হবে। চীনের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে নেগেটিভ। এর প্রভাব ওই অঞ্চলে নেগেটিভ হবে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্যও তা নেগেটিভ হবে।

শুধু এশিয়া নয়, মিস জর্জিয়েভার এসব মন্তব্যকে বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য উদ্বেগজনক হিসেবে দেখা উচিত। বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে দেখা দিচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি। সঙ্গে সুদের উচ্চ হার ক্ষতবিক্ষত করছে পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। সপ্তাহান্তে প্রকাশিত তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তে এসে চীনের অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের সরকারিভাবে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চীনের কলকারখানার সক্রিয়তা একটানা তৃতীয় মাসেও সংকুচিত হয়েছে। তিন বছর ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে এই সংকোচন হয়েছে দ্রুতগতিতে। চীনের সম্পত্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চায়না ইনডেক্স একাডেমির জরিপ অনুযায়ী, একটানা ৬ষ্ঠ মাসেও ১০০ শহরে বাড়ির মূল্য পড়ে গেছে।

নীতির পরিবর্তনের পর প্রথম শনিবার মন্তব্য করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এতে তিনি অধিক প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ গ্রহণ এবং ঐক্যের আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে বলেন চীন এক ‘নতুন দশার’ (নিউ ফেজ) মধ্যে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতির মন্দা দেখা দেয়ার অর্থ হলো সেখানে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, যা তৈরি হয় চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকে। সুদের হার উচ্চ হওয়ার কারণে ঋণ নেয়া হয়ে পড়ছে অধিক ব্যয়ের। এই কারণগুলোতে কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ না করার পথই বেছে নিতে পারে। প্রবৃদ্ধিতে ঘাটতি থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক খাত থেকে অর্থ তুলে নিতে পারেন। বিভিন্ন দেশও তাই করতে পারে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে দরিদ্র দেশগুলো। এসব দেশগুলোর হাতে খাদ্য ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানির জন্য অর্থ থাকবে কম। এসব অবনমন পরিস্থিতিতে মুদ্রার মানের পতন ঘটতে পারে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়বে।

ঋণের ওপর সুদের উচ্চ হারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সরকারি পর্যায়ের অর্থনীতিও। বিশেষ করে উদীয়মান মার্কেটগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ঋণ শোধ করতে তাদেরকে লড়াই করতে হবে। অনেক দশক ধরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল চীনের ওপর নির্ভরশীল। তারা চীনকে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বেছে নিয়েছে। সংকটের সময়ও অর্থনৈতিক সমর্থন পায় চীন থেকে। চীন কীভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করছে, তার ওপর নির্ভর করছে এশিয়ার অর্থনীতির টেকসই হওয়া।

বেইজিং এরইমধ্যে জিরো-কোভিড পলিসি বাতিল করেছে। ফলে তেসলা ইলেকট্রিক গাড়ি, অ্যাপল আইফোনসহ কারখানায় প্রস্তুত পণ্যগুলো তার আগের পর্যায়ে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু তেল ও লোহার আকরিকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা বৃদ্ধিতে দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন