English

26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
- Advertisement -

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে মার্চে

- Advertisements -

মার্চ মাসে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আরেক দফায় বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এ দফায় বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়বে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহের ক্ষেত্রে; আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প খাতে নয়। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খরচের ভারে কাবু সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এর প্রভাব পড়বে সব খাতেই। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে আরও বাড়তি চাপ পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের হাতে এ মূহূর্তে দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ ক্রয় আর বিক্রয়ের মধ্যে ব্যবধান বেশি হওয়ায় ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। সেই ভর্তুকি কমাতেই এ সিদ্ধান্ত। সরকারের তরফে তাই একে দাম বৃদ্ধি না বলে বলা হচ্ছে দাম সমন্বয়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে কয়লা আমদানি করতে হয় সেই কয়লার দাম এক সময় ছিল প্রতি টন ৭০ ডলার। সেটা এখন ১৩০ ডলার দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া আগে ডলারের রেট ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। অথচ এখন রেট ১২০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এদিকে আগে যে পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হতো, এখনো সেই একই পরিমাণ কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। যার কারণে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করতে হবে। মার্চের মধ্যেই এ সমন্বয় হবে বলে তিনি মনে করছেন। আর গ্যাসের ক্ষেত্রে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহকৃত অংশের দাম সমন্বয় করা হবে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুতের ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ, যে কোনো দিন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এবারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন করে দাম বাড়ানো হলে তা হবে গত ১৪ বছরে ১৩তম দফায় গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হলে সেটা মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন হবে।

Advertisements

সর্বশেষ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৫ শতাংশ খুচরা এবং পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। এক বছরে মাত্র ১৮ দিন আগে ১২ জানুয়ারি খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। এ ছাড়া এক দফা বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। এর আগে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। সে সময় বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা ২০২২ সালের বিল ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর করা হয়।

সর্বশেষ দুই দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ, পাইকারি বিদ্যুতের দাম ফিডার ভেদে সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এরই মধ্যে ১৭ জানুয়ারি শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রচ- চাপ তৈরি করছে।

সাধারণ মানুষ কিভাবে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিলের চাপ সামলাবে? এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের কাছে বিকল্প কোনো উপায় নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিক্রির মধ্যে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসান করছে গত কয়েক মাস ধরে। বিদ্যুৎ ক্রয় এবং বিক্রয়ের মধ্যে ব্যবধান বেশি হওয়ায় লোকসান বাড়ছে অনেক বেশি।

বিদ্যুৎ বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের শুধুু অবকাঠামো আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব ধরনের উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কয়লা, গ্যাস, জ্বালানি তেল সবই আমদানিনির্ভর। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংকট তৈরি হয়েছে করোনাকাল থেকে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চরম অস্থিতিশীল জ্বালানির বাজার। বেশি দামে জ্বালানিপণ্য আমদানি করতে হয়েছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার পতন বড় বেশি লোকসানে ফেলেছে। আমদানি ব্যয় লাগামহীন বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আইএমএফ-এর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও পরার্মশ রয়েছে, ভর্তুকি তুলে দেওয়ার।

ওই কর্মকর্তা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ডলার সংকটে চাহিদা অনুযায়ী তেল, গ্যাস, কয়লা আমদানি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

Advertisements

এদিকে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ১৪ টাকা। সেটা অন্তত আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। তবে দেশে গ্যাসের যে সরবরাহ ও চাহিদা তার ৬০ শতাংশই ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা।

এদিকে একাধিক বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাদের সময়কে বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে লোকসানে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় প্রতিমাসে শত কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এর একজন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বাল্ক পর্যায়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করায় প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে কোম্পানিটিকে। শুধু ডিপিডিসি নয়, সব বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাই লোকসানে আছে বলে জানা যায় বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে।

গত বছরের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৫, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর ৬ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর ৬ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা করা হয়েছে।

আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও বেড়েছিল সব ধরনের বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে কৃষি, ধর্মীয়, দাতব্য, হাসপাতাল, রাস্তার বাতি, পানির পাম্প, ক্ষুদ্রশিল্প, শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। শুধু বিদ্যুতের দাম নয় সরকারের নির্বাহী আদেশে এক দফা বাড়িয়েছে গ্যাসের দামও। গত বছরই তিন দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছিল প্রায় ১৬ শতাংশ, পাইকারি বিদ্যুতের দাম ফিডার ভেদে সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর ১৭ জানুয়ারি শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন