আমাদের দেশের অনেক নদ-নদী ভাঙনপ্রবণ। নদীভাঙনের কবলে পড়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি স্থানীয় ও পুনঃপুনঃ সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদী যত পরিণত পর্যায়ে এগোতে থাকে, ততই সেগুলো মন্থর, বিসর্পিল অথবা বিনুনি আকৃতির হতে থাকে।
নদীর এই দোলনে নদীতীরের ব্যাপক ভাঙন সংঘটিত হয়। প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেতের ফসল, ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট প্লাবনভূমির একটি অংশ প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের শিকার।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় অসময়ে যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাণ্ডারবাড়ী এলাকায় যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এবার শুষ্ক মৌসুমেই যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্ষা মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তায় যমুনাপারের মানুষ। সিসি ব্লকে বাঁধানো তীর রক্ষা বাঁধ দফায় দফায় ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
সিসি ব্লকের বিভিন্ন অংশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে পুরো বাঁধ এলাকা। এরই মধ্যে নদীগর্ভে ধসে গেছে তীর রক্ষা বাঁধের বেশ কিছু ব্লক। তৈরি হয়েছে বড় বড় ফাটল। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনস্থান মেরামত করা না হলে সম্পূর্ণ বাঁধই নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা তাদের।
যমুনা একটি বিনুনি আকৃতির নদী, যার তীরের উপাদানগুলো ভাঙনের পক্ষে খুবই সংবেদনশীল। সাম্প্রতিক সময়ে যমুনা নদীতে মানুষের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা কারণে নদীর প্রশস্ত হওয়ার প্রবণতা সংকোচন করা হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়তে পারে নদীতে।
যমুনায় যখন নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেই একই সময়ে বাঁধ নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে হাওরাঞ্চলে। হাওরে বাঁধ নির্মাণ কাজের জরিপ শেষ হয়নি। অথচ আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে বোরো ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পিআইসি বা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু ও শেষ করা নিয়ে কৃষকরা শঙ্কায়।
আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যমুনার বাঁধ ভাঙনের স্থান মেরামতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে হাওরাঞ্চলে দ্রুত জরিপের কাজ এবং পিআইসি কমিটি গঠন শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।