English

30 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

নিবন্ধন না উৎকোচ বাণিজ্য? বেসরকারি হাসপাতাল

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

যেকোনো প্রতিষ্ঠান চালু করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া অপরিহার্য। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন বা ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই চলছে খেয়ালখুশিমতো, নিবন্ধন ছাড়া। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিতে গেলেও হাজারটা ঝক্কি পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একে অপরকে দোষারোপ করছে।
সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দিলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। পরে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনই ছিল না। এর মালিক সাহেদ করিম, যিনি জালিয়াতির দায়ে বর্তমানে কারাগারে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাঁর ওপরই কোভিড-১৯ পরীক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়েছিল। রিজেন্ট কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৩ আগস্টের মধ্যে সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন নবায়ন করার নির্দেশনা জারি করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭ হাজার ২৪৪। তবে লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২২ আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার ১০৩টি আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন হয়েছে। যথাযথ কাগজপত্র জমা ও বিভিন্ন শর্ত পূরণ না করতে পারায় সাড়ে চার হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান ঝুলে আছে। সরেজমিন পরিদর্শন না হওয়ায় দেড় হাজারের অধিক হাসপাতাল নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছে। আবেদনের বাইরে থেকে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার।
বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিবন্ধনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব শর্ত দিয়েছে, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অবকাঠামোগত যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তা কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে উৎকোচ দিলে ঠিকই নিবন্ধন মেলে কিংবা নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালানো যায়। উৎকোচ ও অবাস্তব শর্ত পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এ প্রক্রিয়া একটি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এবং স্বাস্থ্য খাতে তাই হয়েছে। অবাস্তব শর্তের কারণে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল যেমন লাইসেন্স নবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি উৎকোচের মাধ্যমে কোনো নিবন্ধনের শর্ত পূরণ ছাড়াই লাইসেন্স মিলছে, নবায়ন হচ্ছে। বেসরকারি খাতের অনেক মালিক এর সুযোগ নিচ্ছেন এবং খাতটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দুই বা ততোধিক হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে দেখানো অনৈতিক। কিন্তু অনেক বেসরকারি হাসপাতাল তাই করছে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন না করেই সনদ দিচ্ছেন। কেবল বেসরকারি হাসপাতালের নিবন্ধন নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে। এর প্রতিকার কী? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুষ্টের লালনেই বরাবর ব্যস্ত।
সব হাসপাতালকেই নিবন্ধনসংক্রান্ত আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বারডেম ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানও নিবন্ধনের জটিলতায় পড়েছে। বারডেম কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। জনগণই এর মালিক। মালিকের ঘর খালি থাকায় নিবন্ধনপ্রক্রিয়া এগোয়নি। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিধান কী হবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এ কারণে তো প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধহীন থাকতে পারে না। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিযোগ, প্রতিটি ধাপে ঘুষ দিয়ে নিবন্ধন নিতে হয়। এ অভিযোগ গুরুতর।
উৎকোচের অভিযোগ কেবল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নয়। আরও বহু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একই অভিযোগ এসেছে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় স্বাস্থ্য বিভাগে সাহেদ করিম-আরিফুলদের মতো জালিয়াতদের দৌরাত্ম্য চলতে থাকবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন