অর্থনীতিতে অস্থিরতা এবং আসন্ন বাজেট ঘিরে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের উদ্বেগ এখন চরমে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যে বাজেট পেশ করতে চলেছেন, তাতে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ কমার কোনো লক্ষণ নেই। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই যখন সাধারণ মানুষ দিশাহারা, তখন নতুন করকাঠামো এবং বিভিন্ন গৃহস্থালি ও প্রয়োজনীয় পণ্যে বর্ধিত ভ্যাট তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে।
শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি, মশা মারার উপকরণ, এমনকি ফ্রিজ, টিভি, এসির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্যের দামও বাড়বে।
নানাভাবে ব্যয় কাটছাঁট করে চলা মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।অন্যদিকে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত শিল্প ও ভোক্তা উভয়কেই ভোগাবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য এই কৌশল গ্রহণ করা হলেও এর ফলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিতে পারে, যদিও কৃষি ও খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে এবং কিছু পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব আছে, তবে এর সুফল সাধারণ মানুষ কতটা পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বাজেটে নতুন করে ছয় লাখ ২৪ হাজার জনকে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম।মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, খাদ্যবান্ধব ছাড়াও সরকারের অন্যান্য কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে ৩৭ লাখ মেট্রিক টন চাল বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
এই অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবও বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যেমনটা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারগুলো করছে, রাজনৈতিক সরকার এসে সেগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
দ্রুত নির্বাচন আয়োজন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট প্রণয়ন করা হলে সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হতো এবং ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়ত।
সব মিলিয়ে আসন্ন বাজেট বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তি না এনে বরং চাপ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকারের আরো বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।