আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্বাহী বোর্ডের সভার অনুমোদনক্রমে সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সাত কিস্তির ঋণের প্রথমটি ফেব্রুয়ারিতেই পাওয়া যেতে পারে। ঋণ অনুমোদনের খবরের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তো বা আমাদের এই ঋণ দেবে না।
তাঁরা ভেবেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ এই ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে। এই ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল নয়, সে কথা অর্থনীতিবিদরাও বলছেন। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রভাব পড়েছে সামাজিক সূচকগুলোতেও। তাঁরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পথ দেখাচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।
যদিও এটা মানতে হবে যে দুই বছরের কভিড অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন দেশে কভিড-উত্তর সময়ে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছিল, তার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সন্তোষজনকই ছিল। ওই সময়ে বড় বড় দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের তুলনায় আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ইতিবাচক।
সাম্প্রতিক সময়ে গ্লোবাল ইকোনমি প্রসপেক্টাস-২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে যে পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংক দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ কমে ৫.২ শতাংশ হবে। অন্যদিকে আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৫.৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু চ্যালেঞ্জ অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনো আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো শক্তভাবে মোকাবেলা করা গেলে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফের ঋণের পূর্ণ সদ্ব্যবহারে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
তাঁদের মতে, আইএমএফের ঋণ আমাদের সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে। এই ঋণ রিজার্ভ বাড়াবে। তবে এই অর্থ আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নয়। আর সে কারণেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে। সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করাও জরুরি।
বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আছে। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। আছে মূল্যস্ফীতি।
এর পরও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক শান্তি ও ন্যায়বিচার বজায় রেখে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা ধরে রাখা গেলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে না।